‘ইয়াবা’ প্রেমিককে বিয়ে করে হাজতবাস

একই এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আক্তার শেলী ১৫ বছর বয়সে প্রেমে পড়েছিলেন ২২ বছর বয়সী শাহ আজমের সঙ্গে ২০১১ সালের দিকে। স্কুলের গণ্ডি না পেরুনো এই দুই প্রেমিক সেই সম্পর্ককে প্রণয়ে রূপ দিতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন থেকে পালিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামের বাকলিয়ায়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারা দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তখনও শেলীর প্রেমিক বর ছিলেন সাধারণ একজন বেকার যুবক।

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই সাধারণ এক বেকার যুবক রাতারাতি হয়ে উঠলেন ‘শুটকি ব্যবসায়ী’। বাকলিয়ার কালামিয়া বাজারের সাধারণ বাসা থেকে স্ত্রী শেলীকে নিয়ে উঠলেন অভিজাত সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে। সেই সঙ্গে প্রাইভেট কার, গৃহস্থালির বিলাস বহুল সব অাসবাবপত্র আর সাজ সরঞ্জাম। শুধু কি তাই? স্ত্রীর নামে চারটি কাভার্ড ভ্যান, দুটি ট্রাক, চট্টগ্রাম শহরে চারটি প্লটের মালিক এবং টেকনাফেও ৭৫ খানি জমির মালিক শেলীর সেই বেকার প্রেমিক স্বামী শাহ আজম।

তবে শেষ পর্যন্ত সেই সুখ কপালে বেশিদিন ঠিকেনি। শুটকি ব্যবসার কথা বলে ইয়াবার পাইকারী ব্যবসায়ী শাহ আজমের অাস্তানায় হানা দেয় বায়েজিদ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত শাহ আজমের স্ত্রী ও দুই সহযোগিসহ পুলিশের হাতে আটকের পর বেরিয়ে আসে তার আসল রূপ! তার প্রাইভেট কার থেকে ৩৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ শেলী ও তাদের দুই সহযোগীকে আটকের পর সুগন্ধার ফ্ল্যাট থেকে ইয়াবা বিক্রির ৪২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আট মাসের শিশু কন্যা পায়েল সহ হাজতবাস করতে হচ্ছে শাহ আজমের স্ত্রী শেলীকে। হাজতবাস করলেও স্বামীর এই কাজে তার মধ্যে নেই কোনও অনুশোচনা। তার দাবি, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে স্বামী শাহ আজম ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়েছে। আর ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি নাকি স্ত্রীর কাছে একদম চেপে গিয়ে শাহ আজম বলেছিল সে মূলত একজন শুটকি ব্যবসায়ী! তবে নিজের নামে ছয়টি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকের মালিকানা পেতে কোনও প্রশ্নই তুলেননি শেলী।

থানা হাজতে সেলিনা আক্তার শেলী বলেন, ‘তিন বছরের প্রেম শেষে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আমরা পালিয়ে বিয়ে করি। প্রথমে বাকলিয়া থাকলেও পরে সুগন্ধা আবাসিকে ফ্ল্যাটে উঠি। এরপর আমার বাচ্চা হওয়ার কারণে আমি টেকনাফ চলে গেলেও সে (শাহ আজম) চট্টগ্রাম ও টেকনাফে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতো। পরে বাচ্চা ছয় মাস বয়সী হলে আমি আবার সুগন্ধার ফ্ল্যাটে উঠি।’

স্বামী এক সময়ে বেকার থাকলেও হঠাৎ করে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণ কখনো জানতে চেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে কি করতো আমাকে কখনো বলেনি। জানতে চাইলে বলতো, শুটকি ব্যবসা করে। আর কিছু বলতে চায়তো না। এমনকি বলতো, মেয়েদের খেয়ে পরে ভালোভাবে থাকতে পারলেই হলো এত বেশি কিছু জানার দরকার নেই।’

এমনকি ইয়াবা বিক্রির টাকা, ইয়াবা মজুদের বিষয়টিও নিজের অজান্তে তার স্বামী করতেন বলে দাবি শেলীর।

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘তার দোষের কারণে আজকে পুলিশ আমাকেও আটক করেছে। আমার আট মাস বয়সী মেয়েকেও আজকে হাজতে থাকতে হচ্ছে। হয়তো আমাকে জেলেও থাকতে হবে। আমার বাবা নেই কেউ আমার জামিনের জন্যও আসবেনা। আমার স্বামীও তো নাকি পালিয়ে গেছে। আমার কোনও দোষ নেই। এখন কপালে যা আছে তাই হবে।’

তবে বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ইয়াবা ব্যবসার কয়েকটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের মধ্যে একটি শাহ আজ সিন্ডিকেট। নিজস্ব পরিবহনে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে তিনি পাইকারী বাজারে ইয়াবা পাচার করেন চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। এখন পর্যন্ত তার সম্পদের যে হিসেব পেয়েছি, তা শুধুমাত্র শুটকি বা পরিবহন ব্যবসা করে মাত্র দুই-তিন বছরে গড়ে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়। নগরীতেই তার অন্তত পাঁচটি আস্তানার সন্ধান পেয়েছি আমরা।’

ওসি আরো বলেন, ‘শাহ আজমের স্ত্রী যা বলছে সব মিথ্যা ও বানোয়াট। সে এখন নিজেকে বাঁচাতে নীরহ সাজছে। ইয়াবাসহ তাকে কার থেকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া তার বেড রুম থেকেই ইয়াবা বিক্রির ৪২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছি। তাদের রিমান্ডে চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই