উখিয়ায় ইয়াবা পাচারের নতুন কৌশল : ধরা ছোয়ার বাইরে গডফাদাররা

কক্সবাজার উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের অসম তৎপরতা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এদের নিয়ন্ত্রণে সড়ক ও নৌপথে সমানতালে পাচার হওয়া ইয়াবার বড় বড় চালান পৌছে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন মাঝে মধ্যে ইয়াবার চালান আটক করতে সক্ষম হলেও পাচারের কৌশল পরিবর্তনের কারণে শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারীরা ধরা ছোঁয়ার অগোচরে থেকে যাচ্ছে। তথাপিও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিজিবি, কোষ্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০৮ কোটি টাকা দামের ৩৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৬১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।

সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজন জানায়, পায়ে হেঁটে অথবা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় অনায়াসে পারাপার হতে সক্ষম উখিয়ার বালুখালী থেকে পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার নাফ নদী এখন ইয়াবা পাচারকারী চক্রের নিরাপদ রোডে পরিণত হয়েছে। নাফ নদী অতিক্রম করে আসা মিয়ানমারের বোতলজাত মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে মজুদ হওয়ার পর সুযোগমত সড়কপথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মরিচ্যা বিজিবির হাতে আটক কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালের রোগী বহনে নিয়োজিত ভাড়াটিয়া অ্যাম্বুলেন্স সহ ইয়াবা আটকের ঘটনায় প্রমাণ মিলেছে।

সীমান্তের পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া বিওপির নায়েব সুবেদার মোঃ মুসা জানান, নাফ নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার কারণে বিজিবির টহল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবল ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও চোরাচালান প্রতিরোধে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্টের নায়েব সুবেদার ফেরদৌস মোল্লা জানান, সড়কে বিজিবির শক্ত নজরদারির কারণে পাচারকারী সিন্ডিকেট ঘন ঘন তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ইয়াবা পাচার করার কারণে অনেকটা তাদের অগোচরে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ৭ দিন যাবত বিভিন্ন সোর্স মারফত খবর সংগ্রহের ভিত্তিতে গত ১৭ আগষ্ট দিবাগত রাত ৩টার দিকে অভিনব কায়দায় অ্যাম্বুলেন্স যোগে পাচার করার সময় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

এ সময় বিজিবি সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সের চালক মোঃ শফিউল আলম ও এমএসএফ হল্যান্ড কুতুপালং হাসপাতালের নার্স শিকা রাণী দাসকে আটক করেছে। তবে শিকা রাণী দাশ এ ঘটনার সাথে তিনি ও এমএসএফ হসপিটাল মোটেই জড়িত নয় বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের পরিচালক মেজর মহি উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ১৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরের উপকুলীয় এলাকা কলাতলী থেকে ১১ কোটি টাকা দামের ২ লক্ষ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এর আগে ১ জুন উখিয়া উপকুলীয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৮ কোটি টাকা দামের ৪ লক্ষ পিস ইয়াবা সহ একটি মাছ ধরার ফিশিং বোট জব্দ করা হয়েছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানান, রোহিঙ্গা মহিলাদের ব্যবহার করে পাচারকারী চক্র ইয়াবা পাচার করছে। তিনি বলেন, ১৭ আগষ্ট সড়কের কুতুপালং বুড়ির ঢালা এলাকায় যাত্রীবাহী গাড়ি তল্লাশী চালিয়ে ১৭৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ হানিফা বেগম (৩০) নামের এক রোহিঙ্গা মহিলা সহ কেরুনতলী গ্রামের মোহাম্মদ আমিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে।

এদিকে উখিয়ায় কিছু ইয়াবা পাচারকারীরা ওপেন সিক্রেটের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা বিক্রি করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানান। ইয়াবা ও মাদক দ্রব্য বিক্রেতাদের যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সিকদার বিল এলাকার মৃত পুতি আলী পন্ডিতের ছেলে নুরুল ইসলাম, ডেইল পাড়া গ্রামের জয়নাল, তুলাতুলি পাড়া গ্রামের আবদুল করিম, পূর্ব ডিগলিয়া পালং গ্রামের মন্ডল সওদাগরের ছেলে নুরুল আমিন প্রঃ আমিন, চাকবৈঠা গ্রামের মোঃ ইকবাল ও পশ্চিম ডিগলিয়াপালং গ্রামের অলি আহাম্মদ হাজীর ছেলে আবদুল্লাহ।

টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল আবু জার আল জাহিদ সাংবাদিকদের জানান, ইয়াবা ধরা পড়লে পাচার বেশি হচ্ছে তা সঠিক নয়। তবে তিনি বলেন, সাগরপথে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে কোষ্টগার্ডের সদস্যরা নিয়মিত টহল জোরদার করেছে। তাছাড়া সড়কপথে বিজিবি সদস্যরা ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে কড়াকড়ি আরোপ অব্যাহত রাখায় পাচারকারী চক্রের তৎপরতা আগের ন্যায় অনেকটা কমেছে।



মন্তব্য চালু নেই