উচ্ছেদের তালিকায় খালেদার গুলশান কার্যালয়

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অভিজাত এই আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কার্যালয় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ‍গুলশানের সব বাণিজ্যিক ভবন, রাজনৈতিক কার্যালয় ও অন্যান্য অবৈধ ভবনের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ও।

রাজউকের তথ্যমতে, প্রথম ধাপে উচ্ছেদ করা হবে রেস্টুরেন্ট ও বার-এর মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর পরের ধাপে আসবে রাজনৈতিক কার্যালয় ও অন্যান্য অবৈধ প্রতিষ্ঠান।

জানতে চাইলে গুলশান এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজউকের (জোন-৪) অথরাইজ কর্মকর্তা বলেন, গুলশান একটি আবাসিক এলাকা। এখানে অনেক কূটনীতিক অবস্থান করেন। এই এলাকা থেকে সব বাণিজ্যিক কার্যালয়, বার, রেস্টুরেন্ট ও অবৈধ ভবন সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজনৈতিক কার্যালয়ও রয়েছে এই তালিকায়।

কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, এটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে খুব শিগগির শুরু হবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া।

এই গুলশানেই অবস্থিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে তার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে।

রাজউকের অথরাইজ কর্মকর্তা বলেন, “শুধু খালেদা জিয়ার কার্যালয় নয়, এই ধরনের সব কার্যালয় ও ভবন সরিয়ে ফেলা হবে। অভিজাত এই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”

তবে রাজউকের তালিকায় বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থাকার বিষয়ে কিছু জানেন না দলটির নেতারা। জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “চেয়ারপারসনের কার্যালয় সরিয়ে ফেলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাইনি আমরা।”

এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর আমরা করণীয় ঠিক করব। এর আগে কিছু বলা যায় না।”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, “শুধু গুলশান এলাকা নয়, পুরো দেশই তো অনিরাপদ। সারা দেশেই এখন জঙ্গি হামলা ঘটছে। সুতরাং নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেই ভালো হয়।”

গত ১ জুলাই রাতে গুলশান ২ নম্বরের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৩ জনকে জিম্মি করে একদল অস্ত্রধারী। পরদিন সকালে নিরাপত্তা বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের পরাস্ত করে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের রাতেই হত্যা করে জঙ্গিরা। কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। এর আগে হামলার পরপর জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও বোমায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।

ওই হামলার পর কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার সেখান থেকে বাণিজ্যিক কার্যালয় ও অবৈধ ভবন সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের জরিপে জানা যায়, পুরো গুলশানে ৯০৪টি আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। আরেক অভিজাত এলাকা বনানীতে রয়েছে এ ধরনের ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠান। তবে গত আট বছরে এ সংখ্যা বেড়ে এখন দুই হাজার ছাড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গুলশান আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় একদিকে অস্বাভাবিক যানজট বেড়েছে, অন্যদিকে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা।

ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করার জন্য এর আগেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজউক। কিন্তু প্রতিবারই পিছু হটেছে রাজধানীর উন্নয়ন তদারকির সংস্থাটি। সম্প্রতি জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আবার।

রাজউক বলছে, গত কয়েক দিন ধরে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার তালিকা হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলছে। এটি শেষ হলেই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খুব শিগগির কূটনৈতিক এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাখা হবে না। প্রাথমিকভাবে গুলশান, বনানী ও বারিধারার আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁ উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে অভিযান শুরু হবে।

এসব এলাকার স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালগুলো সরাতে তিন মাস সময় দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে তাদের জন্য নতুন জমি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই