উচ্ছেদ অভিযান: বিকেলের সিলগালা, সন্ধ্যায় উধাও

রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট ও তার আশপাশ এলাকায় বৃহস্পতিবার অবৈধ হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযান শেষে পাতাল মার্কেটের প্রবেশ পথ সিলগালা করে দেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু এর কিছু সময় যেতে না যেতেই তা ভেঙে ফেলেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা। ফলে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে মেয়র সাঈদ খোকনের দৃঢ় মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

তারা বলছেন, মেয়র তার বক্তব্যে হকারদের উচ্ছেদের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখালেও বাস্তবে তা করতে পারছেন না কেন? তাহলে মেয়রের শক্তি বেশি না কি অবৈধ দোকানদারদের?

তাদের অভিযোগ, এর আগেও এ এলাকায় একাধিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল সিটি কর্পোরেশন। তখনো অভিযান শেষ হতে না হতেই উচ্ছেদের জায়গাগুলো আবার দখল করে নেয় হকাররা। মেয়র নিজেই এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন।

তবে কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা নিয়ম মেনে দোকান পরিচালনা করবেন বলে মুচলেকা দিয়েছেন। এ জন্যই তাদের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কের অবৈধ হকার উচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটসহ তার আশপাশের অবৈধ হকারদের ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও তারা দোকান সরিয়ে নেননি। এরপর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ওই দোকানগুলোতে অভিযানে যায় সিটি কর্পোরেশন।

এসময় প্রতিটি দোকানকে অর্থদণ্ড করেন কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একপর্যায়ে সমিতির নেতারা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে উচ্ছৃঙ্খল স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ ও মামুন অর রশিদ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে আটক করে নগর ভবনে নিয়ে যান। এ সময় আরো ১০ জনকে আটক করা হয়। বিকেলের দিকে মার্কেটটির মূল প্রবেশ পথসহ ৬টি গেট সিলগালা করে দেয়া হয়।

এর কিছুক্ষণ পর হকারদের একটি দল স্লোগান দিয়ে নগর ভবনের দিকে ছুটে আসেন। এসময় মেয়রও দলবল নিয়ে ছুটে যান। একপর্যায়ে পিছু হটে হকাররা। মেয়রকে মহানগর ছাত্রলীগসহ উপস্থিত জনতা সহযোগিতা করেন।

পরে জনতার উদ্দেশ্যে সাঈদ খোকন প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ঢাকার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বলছি- আপনারা হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করুন। রাস্তা কাউকে অবৈধ দখল করতে দেয়া হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। আপনারা আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’

তিনি আরো বলেন, ‘চলার পথে নানা সংকট আসবে। আমরা মসৃণ নই। আমরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কর্মী। আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম সহ্য করেছি। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে নগর ভবনে এসেছি। আপনাদের অধিকার অর্জনে জীবন দিতে হলে দেব। আমি আপনাদের হাতে একটি সুন্দর ঢাকা তুলে দেব।’

অথচ এর কিছুক্ষণ পরই সিলগালা খুলে নিয়েছেন সমিতির নেতারা। এসময় মার্কেটের ভেতরে বড় বড় হকস্টিক নিয়ে কয়েকজনকে পাহারা দিতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গিয়ে মার্কেটটির এমন চিত্রই দেখা গেছে।

কথা হয় মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন হকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেয়রের ওপরও লোক আছে না। হেগোর থিকা অনুমতি লইয়া তারা (মার্কেট সমিতির লোকজন) সিলগালা খুইল্যা নিছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ জানান, ‘আমরা মার্কেটটির প্রবেশ পথ সিলগালা করে দিয়ে এসেছি।’

কিন্তু সিলগালা তো নেই এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা সবকটিতে তালা দেইনি। অন্য পথগুলোতে মার্কেটের লোকজন তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা এসে মুচলেকা দিয়ে গেছে। এখন তা খুলে নিতে বাধা নেই।’



মন্তব্য চালু নেই