উত্তর কোরিয়া নিয়ে তিন বিশ্বশক্তির প্রক্সি যুদ্ধ?

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা শুধু এ দুটি দেশের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ নেই, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে চীন ও রাশিয়াও। এর আগে কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র যে শতাধিক বিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসন পাঠিয়েছে, তার ওপর নজর রাখতে গোয়েন্দা জাহাজ মোতায়েন করেছে চীন ও রাশিয়া। ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া উত্তর কোরিয়া সীমান্তে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে। এর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে উত্তর কোরিয়া।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধের উদাহরণ হয়ে আছে সিরিয়া। সেখানে একদিকে বাশার আল আসাদের সরকারকে রক্ষায় লড়াই করছে ইরান ও রাশিয়া। অপরদিকে আসাদবিরোধীদের সমর্থন ও স্বল্প সংখ্যায় হলেও অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়াতেও এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। দেশটিকে সব সময়ই নিজেদের মধ্যে একটি বাফার স্টেট হিসেবে বিবেচনা করে চীন ও রাশিয়া। আর এ কারণে সেখানে স্থিতিশীল একটি পরিস্থিতিও চায় বেইজিং ও মস্কো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ও কিমকে থামানো না গেলে উত্তর কোরিয়াকে ইস্যু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করবে তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন, বর্তমান সময়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছে। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জবাবে দেশটিতে মার্কিন প্রশাসনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক নিচে নেমে এসেছে। ফলে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি সিরিয়ার মতো হতে পারে- এমন আশঙ্কাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে আছে জাপান। সোমবার জাপানি গণমাধ্যম ‘ইয়োমুরি শিমবুন’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে রয়েছে কমপক্ষে ৬৪ শতাংশ জাপানি। তবে এ অঞ্চলে খুব সহজে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দিতে চাইবে না চীন। যদিও কোরীয় দ্বীপে জঙ্গিবিমানবাহী মার্কিন রণতরী মোতায়েনকে ঘিরে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো সময় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেইজিং।

তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া রোববার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার চেষ্টা চালায়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও পিয়ংইয়ংয়ের সমরশক্তিকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না বলে এশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেছেন।

তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ আর্থার ডিং বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া সরকার এরই মধ্যে যথেষ্ট নিবারক শক্তি অর্জন করেছে। শনিবার একটি সামরিক প্যারেডের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, এখন তাদের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গুটিয়ে নেয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মতো উত্তর কোরিয়াও কার্যত একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে এ বাস্তবতার অর্থ হল, উত্তর কোরিয়াকে অন্যান্য পরমাণু শক্তিধর দেশের সমান হিসেবে বিবেচনা না করলেও অন্তত সাবধানে চলতে হবে।’ বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শুরু হলে অন্তত ১০ লাখ মানুষ নিহত হবে। তাছাড়া যুদ্ধ হলে পতন হবে স্বৈরশাসক কিম জং উনের। তাতে সীমান্ত নিয়ে সমস্যায় পড়বে চীন।

কারণ কিম চীনের মিত্র। এ কারণে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক সব সময়ই উষ্ণ। কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন রণতরী মোতায়েনের পর থেকে এ অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা ঘিরে রয়েছে নানা আশঙ্কা। তার ওপর উত্তর কোরিয়ার বারবার পরমাণু হামলার হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থানের কারণে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে চীন ও রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকবে না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আর এতে কিমের দেশ হয়ে উঠতে পারে চীন-রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র।



মন্তব্য চালু নেই