উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দেশ ‘বাংলাদেশ’

বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রকল্পসহ সব বড় বড় মেগা প্রকল্প এ সরকারের আমলে হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে এ সরকারের শাসনামলে।

দেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অরাজকতা দেখা গেলেও সরকার এতে পিছু হটে নি। বরং সবসময় জনগণের সহযোগিতায় দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন।

বাংলাদেশের মানুষের অনেক স্বপ্ন এখন বাস্তবে রুপ নিয়েছে, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে ফ্লাইওভার, ফোর লেন, এইট লেন রাস্তা, মেট্রোরেল, পাতাল রেল, নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পার্বত্য এলাকায় নতুন রেলপথ নির্মাণ, ঢাকায় ১৪২ তলা আইকন টাওয়ার নির্মিত, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বৈদ্যুতিক রেলপথসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

তবে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় দিক হল ১০ মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে আলাদা করে বরাদ্দ রাখা। এর ফলে প্রকল্পের কাজ আরো দ্রুত শেষ হবে।

প্রকল্প গুলো হল :

পদ্মা বহুমুখী সেতু: কয়েক দফা বৃদ্ধির পর এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, শেষ হবে ২০১৮ সালে। গত এপ্রিল পর্যন্ত এর ৩২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা সংযোগ সড়ক ও মাওয়া সংযোগ সড়কের কাজও শেষের পথে। ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন কার্যক্রম ও পরিবেশ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৭- ২০১৮ ও ২০১৮- ২০১৯ অর্থবছরের জন্য এ প্রকল্পটির অর্থায়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭- ২০১৮ অর্থবছরে পাঁচ হাজার পাঁচ শ’ ২৪ কোটি টাকা এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পাঁচ হাজার চার শ’ ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। সরকার মনে করছে, এ সেতু বাস্তবায়ন হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এক দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে এবং প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (প্রথম পর্যায়): পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে সরকার ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে। এর বাইরে রাশিয়ার প্রকল্প সাহায্য রয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা। ঘোষিত অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬১৮ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল: ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সরকার ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ও জাপান সরকারের জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে অত্যাধুনিক মেট্টোরেল ব্যবস্থা। মেট্টোরেল লাইনটি উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে শুরু হয়ে মতিঝিলে গিয়ে শেষ হবে। সরকার মনে করছে, এভাবে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলে ২০১৯ সালে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালে পুরো প্রকল্প চালু হবে অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর: কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প এটি। ৫০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প তিন ধাপে বাস্তবায়নের সময়কাল ২০১৫ থেকে ২০৫০ সাল। প্রথম ধাপে একটি, দ্বিতীয় ধাপে দুটি ও তৃতীয় ধাপে তিনটি পোতাশ্রয় করা হবে। এ প্রকল্পের জন্য বর্তমান অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। জি টু জি ভিত্তিতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও দুবাইয়ের চারটি প্রতিষ্ঠান জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি’র একাধিক সভায় পাওয়া প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা- নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

পায়রাবন্দর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯শে নভেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ড্রেজিং কার্যক্রমে যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে, তাতে এ বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গেল এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রকল্পের বিপরীতে ৩১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২.১%।

মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বগেরহাট জেলার রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। এর মাধ্যমে ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি আলাদা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। গেল অর্থবছরে ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও চলতি অর্থবছরে রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের ভূমি প্রক্রিয়াকরণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ঢাল সুরক্ষা কার্যক্রমের বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ৬০০ করে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রকল্প ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ দেবে জাপান। প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এলএনজি টার্মিনাল: গ্যাসের সংকট নিরসনে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্দেশ্যে মহেশখালীর উপকূলে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টার্মিনাল নির্মাণ হবে। টার্মিনাল থেকে মূল ভূখণ্ডে গ্যাস আনতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন। এলএনজি আমদানি ও ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনার ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় তিন হাজার আট শ’ ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। মেগা প্রকল্পের বইতে বলা হয়েছে, ভাসমান প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রকট গ্যাস সংকট নিরসনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের শুরুতে চালু হতে পারে।

কক্সবাজার-দোহাজারি-গুনদুম রেলপথ: ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন সময় তিন বছর এগিয়ে আনা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেবে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার নয় শ’ ১৯ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়ন থেকে মেটানো হবে। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৩১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। দুই ধাপে ১২৯ দশমিক ৫৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ না থাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়।

পদ্মা রেলসেতু সংযোগ: ২০১৪ সালের ২৩শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় পদ্মা সেতুতে উদ্বোধনের দিন থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের কার্যক্রম নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এর ভিত্তিতে সরকার ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০২২ সালে শেষ করার টার্গেট রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ২ শতাংশ সুদে ২০ বছর মেয়াদে চীন থেকে ঋণ নেয়া হবে। বাকি ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়ন থেকে মেটানো হবে। ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্প হলে ঢাকা-খুলনা পথে ২১২, ঢাকা-যশোর পথে ১৮৪ এবং ঢাকা-দর্শনা পথের ৪৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এই প্রকল্পের জন্য বর্তমান বাজেটে ৪ হাজার ১০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকার মনে করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোট দেশীয় উৎপাদন (জিডিপি) আনুমানিক এক শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে নয় সামাজিক অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বর্তমান সরকা বিশ্বের কাছে দেশকে উচ্চ মানে অধিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশ একটি রুল মডেল।



মন্তব্য চালু নেই