উন্নয়ন ও সম্ভাবনায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেল : বিল উইন্টারস

হলি আর্টিজান বেকারিতে সহিংস হামলার পর যখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ঠিক তখনই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিল উইন্টারস বাংলাদেশ সফর করেন।

এই সময় তিনি বলেন, জঙ্গী হামলা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পুরো বিশ্বের এ ধরনের ঘটনাগুলো এখন উদ্বেগের কারণ। এর মানবিক ক্ষতি অপূরণীয়। আর্থিক ক্ষতিও ব্যাপক। এর কোনো সহজ সমাধান নেই। গোটা বিশ্বে এখন এ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপে আমি খুশি। আশা করছি, এর তীব্রতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বিল উইন্টারস দুদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা আসেন এবং বুধবার রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। সফরকালে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব সাক্ষাতে বিল উইন্টারস বিশ্বের যে ৭২টি দেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলোর জন্য তার নেওয়া কর্মকৌশল তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ভূমিকা নিয়ে তার চিন্তাভাবনার কথাও জানান।

২০১৫ সালের জুনে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি খুশি। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে আমার এক বছরের কিছু বেশি হতে চলল। বাংলাদেশের ব্যবসা সম্পর্কে অনেক শুনেছি। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বড় করপোরেশনগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ গ্রহণ করা সম্পর্কে তিনি বলেন, মূলত সুদের হার কম বলেই বড় করপোরেটরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নেয়। এই ঋণের পরিশোধও হবে বিদেশী মুদ্রায়। বাংলাদেশের বিদেশী ঋণ নিয়ে তাই বড় ধরনের কোনো ঝুঁকির বিষয় নেই।

বিল উইন্টারস জানান, বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবসা করতে বিরূপ পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়েছে স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টার্ডকে। কারণ বিশ্বায়ন নিয়ে উন্নত দেশগুলোর সংশয় রয়েছে। যুক্তরাজ্যে অনেকে উন্মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ে ইতিবাচক হলেও উন্মুক্ত সীমান্ত বিষয়ে নেতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্রেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা মুক্ত বাণিজ্যের বিপক্ষে। এটি অর্থবহ নয়। সেখানে বাংলাদেশে ব্যাংকটির ব্যবসা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী।

বাংলাদেশে ব্যবসার অবস্থাও ভালো। এখানকার ব্যবসা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আশা করছি, প্রবৃদ্ধিও পুনরায় বাড়তে শুরু করবে। ঋণ-সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছাড়া ভারতের অর্থনীতি বেশ ভালো। নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার। আমাদের লক্ষ্য হল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদে বিনিয়োগ করা। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা বর্তমানের তুলনায় আরো শক্তিশালী বাজার সৃষ্টি করব। এ অঞ্চলে আমাদের বড় বাজার হলো বৃহত্তর চীন। মধ্যপ্রাচ্যেও অনেক সম্ভাবনা আছে, আফ্রিকায় আমাদের কার্যক্রম আছে।

উইন্টারের সফরসঙ্গী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আসিয়ান এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সিইও অজয় কানওয়াল বলেন, বিশ্বে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শীর্ষ ১০ বাজারের একটিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এজন্য শক্তিশালী বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের আমাদের ব্যবসা খুবই ভারসাম্যপূর্ণ।

বিল উইন্টারস বলেন, আমরা ৩০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করতে চাই, যার পুরোটাই বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশেই ব্যবসার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। নতুন সম্ভাবনায় দিকগুলোয়ও আমাদের মনোযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়েও আমরা উৎসাহী। বাংলাদেশের বাজার আমাদের জন্য রোলমডেল।

তিনি বলেন, এখানে আমরা লোকাল ব্যাংকিং করে যাচ্ছি, যা আরো বাড়াতে চাই। বাংলাদেশে আমরা আরো বিদেশী পুঁজি নিয়ে আসতে চাই। আমরা সফলভাবে এ কাজটি করে আসছি। আর রফতানি বাণিজ্যে সহায়তার কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। চীন বাংলাদেশসহ আরো বেশকিছু দেশের অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করতে চায়। সবগুলো দেশেই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্বিক প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাজারটি ভালোও করছে। আমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের নেই। এখানে ব্যাংকের অবস্থান খুব শক্তিশালী। গ্রাহক সন্তুষ্টিও ভালো। এটাকে আরো সুসংহত করতে চাই আমরা। আর এসব কিছুর অংশ হতে পেরে আমি খুশি।

এ প্রসঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও আবরার এ আনোয়ার বলেন, বিল উইন্টারসের এ সফর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বৈশ্বিক কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্ব আবার তুলে ধরল। আমরা ১১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গ্রাহকসেবা দিতে পেরে গর্বিত এবং সামনের দিনগুলোতে তা অব্যাহত রাখতে সংকল্পবদ্ধ। সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার



মন্তব্য চালু নেই