উপমন্ত্রী জয়কে নিয়ে অসন্তোষ প্রশাসনে!

যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে সচিবালয়ের সর্বত্র। এর প্রভাব পড়েছে মাঠ প্রশাসনেও। যে কোনো সময় অসন্তোষের অনল ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সরকারের ভিতরে-বাইরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে উপমন্ত্রী জয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি সরকারের প্রতিক‚লে চলে যেতে পারে। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে প্রশাসনের সর্বত্র। এ জন্য সরকারকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের দফতরে উপমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এখনো চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘুরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত দুই দিন ধরে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেষ্টা করে গেলেও এখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কাজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে কাজের কোনো পরিবেশ নেই। উপমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে মন্ত্রণালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অসন্তুষ্ট। তারা দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করে আসছেন। এখন রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মাশুক মিয়ার কক্ষে উপমন্ত্রীর ভাঙচুর এবং সিনিয়র সহকারী সচিব গোলাম কবীরের কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনা এখনো মেনে নিতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
একই মন্ত্রণালয়ের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, উপমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিজের খেয়াল খুশি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন আরিফ খান জয়। যখন-তখন যাকে-তাকে ডেকে নিয়ে শাসাচ্ছেন। ধমক দিচ্ছেন। যেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
গত প্রায় ২১ মাস ধরে এমন যন্ত্রণা নিয়েই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এদিকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে জয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-অসন্তোষের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা গেছে। প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে পুরো পরিস্থিতি বর্ণনা করে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, উপমন্ত্রী যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, এভাবে চলতে পারে না। তারা জানান, আমরা অপেক্ষায় আছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর সংশ্লিষ্ট উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একজন সচিব জানান, এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতেও এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকবে। তখন পরিস্থিতি আর সামাল দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, প্রশাসনে যারা কাজ করে তাদের প্রত্যেকেরই মানসম্মান আছে। একজন উপমন্ত্রী এভাবে যা খুশি তা করতে পারেন না। তিনি বলেন, আশা করছি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এ ঘটনা অনভিপ্রেত। উপমন্ত্রী যে কাজটা করেছেন তাতে প্রশাসনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের আস্থা ধরে রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
আরেক সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন বলেন, এ ঘটনা দুঃখজনক ও খুবই অশোভনীয়। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত হয় না। আর এ ঘটনা যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রী কী করেন সেটা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১১টার দিকে প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের দফতরে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সচিব নূর মোহাম্মদ এবং যুগ্ম-সচিব মাশুক মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে উপমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মিলেমিশে কাজ করার জন্য। কিন্তু সমঝোতা বৈঠক হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যে অসন্তোষ বিরাজ করছে তার অবসান ঘটেনি।



মন্তব্য চালু নেই