উৎসবে মেতে উঠেছে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা

মাগুরা প্রতিনিধ ॥ ষষ্টি পূজার মধ্যে দিয়ে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী কাত্যয়নী উৎসব। আজ বুধবার মহানবমী । আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে দশমীর মাঝ দিয়ে শেষ হবে এ পূজা । তবে এ উপলক্ষে মেলা চলবে একমাস। এ বছর কাত্যায়নী উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মাগুরা শহরের পূজা মন্ডপ ও এর আসপাশের এলাকা। দেশের লক্ষ-লক্ষ দর্শনার্থীরা এ পূজায় অংশ নেবে । এ বছর দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা, গেট-প্যান্ডেল, ডিসপ্লে ও লাইটিংয়ে আনা হয়েছে নতুনত্বের ছোয়া।

উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু জানান, এ বছর জেলায় ৮৪ টি মন্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাগুরা শহরে ব্যাপক আয়োজনে হচ্ছে ১৪ টি।এটি হিন্দু ধর্মাম্বলীদের পূজা হলেও এ উৎসবে অংশ নেন ও সহযোগিতা করেন সকল ধর্ম, বর্নের মানুষ। এ উৎসবকে ঘিরে দেশ-বিদেশের লক্ষ-লক্ষ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। সে কারনে দর্শকদের তৃপ্তি মেটাতে এবছর তারা একদম নতুন অঙ্গিকে প্রতিমা তৈরী করেছেন। আলোকসজ্জা ও ডিসপ্লের পাশাপাশি রামায়নের বর্নিত কাহিনী অনুসারে তৈরী করেছেন গেট, প্যান্ডেল।

দরিমাগুরা মন্দিরের প্রতিমা শিল্পি উজ্জলগুরু জানান, তিনি প্রতিমার মাঝ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন কাত্যায়নী রূপে মঙ্গলময়ী মা দূর্গা ও তার সন্তানেরা কিভাবে সকল অসুভ শক্তিকে পরাস্ত করে মানুষের কল্যানে কাজ করছেন।

একইভাবে নিজনান্দুয়ালী নিতাইগৌর গোপাল সেবাশ্রম, জামরুল তলা, নতুন বাজার সাহাপাড়া, পারনান্দুয়ালী, সাতদোহা পাড়া, বাটিকাডাঙ্গা এলাকার পূজা মন্ডপগুলোও তাদের আয়োজনে ভিন্নতা এনেছেন।

মাগুরার বিদায়ী পুলিশ সুপার এহসান ঊল্লাহ জানান, কঠোরভাবে কাত্যায়নী পূজার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারী ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক, আনসার, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া গোটা শহর ও পূজা মন্ডপ এলাকায় বাসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

অন্যদিকে, পূজার পাশাপাশি শুরু হয়েছে মেলা । ইতিমধ্যেই সেখানে দেশের বিভিন্ স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা তাদের পরসা সাজিয়ে বসেছে । যা চলবে পূজা শেষ হবার পরও মাসাধিকাল । মেলায় কাঠের ফার্নিচার ,হাড়ি-পাতিল, তৈরি পোষাক ,চিনা মাটির জিনিসপত্র ,কসকেটিক্স, বাচ্চাদের খেলনা ,সামদ্রিক শামুক-ঝিনুকের গহনা,শো-পিচ, থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন পরসা সাজিয়ে ইতিমধ্যে বসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দোকানীরা ।

পাশাপাশি সার্বজনীন রুপ নেয়া ক্যাতায়নী পূজা উপলক্ষে জেলার প্রতিটি মানুষ উৎসবে মেতে উঠেছে । পূজাকে ঘিরে জেলা পুলিশ প্রশাসন প্রতিটি পূজা মন্ডপ এলাকায় ও শহরের রাস্তাঘাটে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে । পাশাপাশি র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের টহল চলছে নিয়মিত । এ পূজার আনন্দ নিতে জেলা উপজেলা থেকে বিভিন্ন মানুষ ভিড় করছেন তাদের স্বজনদের বাড়িতে । তাছাড়া পাশ্ববতী জেলা যশোর , ফরিদপুর ,নড়াইল ,ঝিনাইদহ , কালিগঞ্জ , মেহেরপুর ,কুষ্টিয়া ,চুয়াডাঙ্গা ,বাজবাড়ি জেলার আগত দশনার্থী ভিড় করে এ উৎসবে । দেশে দশনাথী ছাড়াও ভারত ,নেপাল ও অন্যান্য দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ আসে এ পূজায় ।
উল্লেখ্য, দাপর যুগে কোন এক হেমন্তের শুরুতে যমুনা নদীর তীরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালাবৃন্দ কাত্যায়নী দেবীর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর,বন্ধু ,স্বামী ,পুত্র হিসাবে আরাধনা করত । তাদের এক মাসব্যাপী আরাধনা সেসময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হত । তারই অনুকরণে ১৯৫০ সালের দিকে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় প্রথম জাকজমকপূর্ণ ভাবে এ পূজা শুরু হয় ।

শোনা যায় ,মাগুরা পারনান্দুয়ালী গ্রামের জেলে পাড়ায় ধণাঢ্য সতিশ মাঝির বাড়িতে বৃহদাকারে এই কাত্যায়নী পূজার উৎসব শুরু হয় । এরপর মাগুরা জেলাতে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে গত দুই যুগ ধরে এর প্রসার লাভ করে ।



মন্তব্য চালু নেই