এই সেই ভিক্ষুক : যিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করতেন

ভিক্ষাবৃত্তি নিতান্তই ঘৃণিত কাজ। শরীরে সামর্থ্য থাকলে পারত পক্ষে কেউ এ কাজে আগ্রহী নয়। তবুও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিক্ষুকদের উপস্থিতি নিতান্তই কম নয়। সাধারণ পথচারীরাও তাদের শূন্য হাত পূর্ণ করতে দু’ দশ টাকা দান করতে মোটেও কসুর করেন না। এটি মানবিকতার উদাহরণ বটে। কিন্তু যদি জানতে পারেন- ’ভিক্ষুক লাখ পতি!’ এবং ভিক্ষা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠনের ভিক্ষার টাকা দান করেন তবে নিশ্চয়ই চোখ উঠবে চড়ক গাছে।
ঘটনাস্থলটি ভোলার সদুর চরের বাসিন্দা হারেছ মিয়া দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ভোলার বিভিন্ন প্রান্তরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছেন।

সম্প্রতি তার মৃত্যু হলে জানা যায় তার গচ্ছিত সম্পদের কথা। ঐ স্থানীয় লোক জন বলেন হারেছ মিয়া জীবিত থাকা কালে তিনি মসজিদ,মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার ভিক্ষার টাকা দান করতেন এবং শেষ জীবনে তিনি হজ্জ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলতেন ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে মানুয়ের উপকার করমু আর আমি একবার হজ্জে জামু। হারেছ মিয়ার পরিবার সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছে জনতে চাইলে তারা জানান ১৯৭০সনের বন্যায় তার এক মাত্র ছেলে সেরাজ মারা যায়। আর স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। পরিবারও তাকে ত্যাগ করে।

তখন ভিক্ষাবৃত্তিই হয়ে যায় তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। গত বছর মারা যায় স্ত্রীও । ভিক্ষুক হারেছ মিয়া ভোলার উত্তর দিঘলদীর লিয়াকত হোসেন মনসুর চেয়ারম্যান এর বাসায় থাকতেন এবং আমানত পাড়ার মস্জিদে নামাজ পড়তেন। এদিকে সোনালী ব্যাংক জোনাল কার্যালয়ে ম্যানেজার শেখ মসিহুল মুলক দৈনিক কালবেলার জেলা প্রতিনিধিকে জানান তার একাউন্টে ২লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা গচ্ছিত আছে। তার মৃত্যুর আগে ব্যাংকে তার গচ্ছিত সম্পদের নমিনী করে যান তাই ভাইবেটি জামাই খালেকের নামে। এ ব্যাপারে ব্যাংকের ম্যানেজার বলেন যাতে কোন ধরনে হয়রানী না হয় সে জন্য আমরা খেয়াল রাখবো। আর যাকে নমিনী করা হয়েছে এবং মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ নিয়ে আসলে আমরা মৃত হারিছের টাকা দিয়ে দেব।

এদিকে সদুর চর সুলতানিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আঃ মন্নান হাওলাদার ও ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন আমাদের জীবনে এ রকম ঘটনা শুনিনি এবার আমরা দেখলাম । তারা বলেন ২৬ শে জুন শুক্রবার সারা দিন বর্ষা হলেও ঠিক মাগরীব মুহুর্তে তার মৃত্যৃর সময় বর্ষা ছিলনা এবং কবর খুরতে গিয়ে কোন পানি আসে নাই। অন্যদিকে ভোলা সদর রোডের ব্যবসায়ী ইব্রাহীম, শিপন ও রুবেল মিয়া জানান, আমাদের থেকে ভিক্ষা নিয়ে অপর ভিক্ষুককে দান করতে দেখেছি।

মৃত্যুর পূর্বে হারেছ মিয়া মনসুর চেয়ারম্যান ও সুলতানিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আঃ মন্নান এর উপস্থিতিত্বে অছিয়ত করে যান আমার ব্যাংকে রক্ষিত টাকার মধ্যে মসজিদের সভাপতির কাছে একলক্ষ টাকা থাকবে,যা দিয়ে বিভিন্ন সমস্যাগ্রস্থ মসজিদের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যয় করা যায়। বাকি টাকার মধ্যে ঐ মসজিদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা, ভাইর বেটি জামাইকে পঞ্চাশ হাজার টাকা,দুই জন হাফেজকে বিশ হাজার টাকা। বাকি ১৭হাজার টাকা তার মৃত্যুর পরে তার খরচাদির কাজে ব্যয় করা হবে।

উল্লেখ্য যে জীবিত থাকা কালে হারেছ মিয়া সুলতানিয়া জামে মসজিদে ১০হাজার টাকার টাইল্স কিনে দেন।



মন্তব্য চালু নেই