এই হৃদরোগটির ব্যাপারে আপনি জানেন কী?

পেরিকার্ডাইটিস এমন একটি অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডের উপরের পর্দা বা থলিটি ইনফ্ল্যামড বা উদ্দীপ্ত হয়। হৃদপিণ্ডের উপরের এই পর্দাটিকে পেরিকার্ডিয়াম বলে। পেরিকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডকে ধরে রাখে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করে। এই থলিটি টিস্যুর দুটি স্তর নিয়ে গঠিত। এই দুটি স্তরের মাঝে এক ধরণের তরল থাকে। এই তরল দুটি স্তরের ঘর্ষণ রোধ করে। পেরিকার্ডাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই চলুন। লক্ষণ বুকে ব্যথা : পেরিকার্ডাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যথা হওয়া। তীক্ষ্ণ ও ছুরিকাঘাতের মত ব্যথা (পেরিকারডিয়াম ও হার্টের মাঝে ঘর্ষণের ফলে হয়ে থাকে)। এই ব্যথা ঘাড়ে ও কাঁধেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কদাচিৎ হাতে ও পিঠেও ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথার অবস্থা আরো খারাপ হয় কাশি দিলে, ঢোক গিললে বা শুয়ে পড়লে। সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। · নিম্নমাত্রার জ্বর থাকতে পারে। · হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। কারণ বিভিন্ন কারণে পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে। ভাইরাস ইনফেকশনের কারণে হওয়াটাই সবচেয়ে কমন। যদিও ভাইরাস কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বা অন্যকোন সংক্রমণের কারণেও পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে। অন্য সম্ভাব্য যে কারণগুলো আছে তা হল- হার্ট এ্যাটাক বা হার্ট সার্জারি, আঘাত, নির্দিষ্ট কোন ঔষধের প্রতিক্রিয়া বা অন্য কোন শারীরিক কারণেও হতে পারে। শ্বাসনালীর ইনফেকশনের পরেও পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ অজানা থেকে যায়। প্রকারভেদ পেরিকার্ডাইটিস তীব্র (অ্যাকিউট) ও দীর্ঘস্থায়ী(ক্রনিক) এই দুই ধরণের হতে পারে। তীব্র পেরিকার্ডাইটিস হঠাৎ করে হয় এবং সাধারণত বেশিক্ষণ থাকেনা। দীর্ঘস্থায়ী পেরিকার্ডাইটিস আস্তে আস্তে তৈরি হয় এবং নিরাময়েও অনেক সময় নেয়। এছাড়াও আরো কিছু নামে চিহ্নিত করা হয় পেরিকার্ডাইটিসকে যেমন- · আইডিওপেথিক পেরিকার্ডাইটিস (কোন কারণ নির্ণয় করা যায় না)। · ক্রনিক ইফালসিভ পেরিকার্ডাইটিস · ক্রনিক কনসট্রিক্টিভ পেরিকার্ডাইটিস · রিকারেন্ট পেরিকার্ডাইটিস রোগ নির্ণয় বুকের এক্সরে, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম(ECG/ EKG), ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echo), কার্ডিয়াক এমআরআই ও CT scan, কার্ডিয়াক কেথেটারাইজেশন, ল্যাবরেটরি টেস্ট(ব্লাড)ইত্যাদির মাধ্যমে পেরিকার্ডাইটিস নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা যদি অ্যালার্জি অথবা ভাইরাসের কারণে আপনার পেরিকার্ডাইটিস হয় তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবেন। অন্যথায় চিকিৎসক আপনাকে ব্যবস্থাপত্র দেবেন ও সার্জারিও করতে হতে পারে। এছাড়াও আপনার জীবনযাপন প্রণালির পরিবর্তন করতে হবে। ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ননস্টেরয়েডাল ঔষধ দেয়া হয়। সিভিয়ার অ্যাটাকের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড দেয়া হয়। যদি পেরিকার্ডাইটিস সংক্রমণের কারণে হয় তাহলে অ্যান্টিবায়টিক দেয়া হয়। পেরিকার্ডাইটিসে আক্রান্ত রোগী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। যেকোন বয়সের মানুষেরই পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে। তবে ২০-৫০ বছর বয়সের পুরুষদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ১৫-৩০% অ্যাকিউট পেরিকার্ডাইটিস চিকিৎসার পরেও আবার হতে পারে। খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এটি ক্রনিক হয়। পেরিকার্ডাইটিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় অথবা বিশ্রাম ও সামান্য ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে ভালো হয়।



মন্তব্য চালু নেই