একজন সফল নারীর পেছনে আছেন সংসার সামলানো স্বামী

একজন সফল নারী কর্মজীবীর তাই থাকা জরুরি যা একজন সফল পুরুষ কর্মজীবীর থাকা উচিত। আবার বিপরীতটাও সত্য। এমন একজন সঙ্গী যিনি ঘর সামলাতেও হাল ধরবেন। গতানুগতিক স্বামীরা পরিবারের প্রধান হর্তাকর্তা। আর নারীরা সংসার আর সন্তানদের সামলান।সম্প্রতি ভারতে এরিয়াল নামের এক ওয়াশিং পাউডারের বিজ্ঞাপনে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। এক বাবা তার মেয়েকে একযোগে বহু কাজ করছেন। তিনি অফিসের কল ধরছেন, রান্নাঘর সামলাচ্ছেন, সন্তানের দেখভাল করছেন এবং একই সঙ্গে স্বামীর কাজ করছেন। এ দেখে বাবা তার ভুল বুঝতে পারলেন।

অর্থাৎ তিনি তার স্ত্রীকে যে দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা মেয়ে শিখেছেন। মেয়ের জন্যে তিনি ভুল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এবং এ জন্যে তিনি ক্ষমা চাইছেন মেয়ের কাছে। তিনি কখনোই তার স্ত্রীকে সংসারের কাজে সহায়তা করেননি। এভাবে সমাজে যুগ যুগ ধরে স্বামী-স্ত্রীর কাজ যেন ভাগ ভাগ হয়ে গেছে। আমাদের শিশুরা এসব দেখেই বড় হয়েছে। এ বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নিয়ামত বাওয়া। বলেন, এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা সংসার সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরা সেই পরিবেশে বড় হয়েছেন যেখানে নারীর প্রয়োজন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। এ শিক্ষা পরিবার থেকে গ্রহণ করে মানুষ। ঘর-সংসার সামলানোর কাজটাও নিজের বলে মনে করে নিতে হবে। শিশুদের খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লেগো সম্প্রতি বিশেষ খেলনা বের করেছে। যে বাবারা বাড়িতে থেকে শিশুকে সামলাবেন তাদের জন্য উপযোগী খেলনা বলা হচ্ছে একে।

এটি শুধু খেলনা নয়। আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও সংস্কৃতি যেভাবে বদলে যাচ্ছে তারই চিত্র। সিদ বালাচন্দ্র একজন বাবা। পেশায় ফ্রি ল্যান্সার। তিনি জানান, আমি বাড়িতে থেকে শিশুদের দেখার দায়িত্ব নিয়েছি। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন মনে হবে। কিন্তু এক সময় অভ্যাস হয়ে যাবে। আসলে ছেলেরা এগুলো করতে চান না লোকলজ্জার ভয়ে। অথচ এটা আধুনিক জীবনের চাহিদা। কিন্তু কত জন মানুষ বদলে যেতে ইচ্ছুক? একে অনেকে পুরুষের মেয়েলিপনা বলে মনে করেন। যে পুরুষরা বাড়িতে থেকে রান্না করতে চান বা সন্তানের দেখভার করতে ইচ্ছুক, অন্য পুরুষরা মনে করেন, তার হিল জুতো পরা উচিত।

মনোবিজ্ঞানী স্মৃতি সাওনি বলেন, প্রয়োজনের খাতিরে নারীরা যেমন ঘরের বাইরে এসেছেন, তেমনি প্রয়োজনেই পুরুষরা ঘরে প্রবেশ করবেন। এটা একটা ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। সব কাজেই দুজনককে দুজনের সহায়তা করতে হবে। দম্পতিদের সংসার সামলাতে দুজনের কাজে ভারসাম্য আনতে হবে। যে সকল স্বামীরা এসব ক্ষেত্রে আন্তরিক হন না, সে সকল স্ত্রীদের ব্যাপ পেরেশানি পোহাতে হয়। যে নারীরা স্বামীর কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট পান না তাদের আত্মবিশ্বাস থাকে না। এ কারণে তারা মানসিক অশান্তির শিকার হন। অসংখ্য নারী মনে করেন, সংসার সামলাতে দুজনই দুজনের সহযোগী হয়ে উঠলে সম্পর্কটাও ভালো থাকে। পুরুষরাও এ ক্ষেত্রে আন্তরিক হয়ে উঠতে চান। যেমনটা শচীন করেছেন স্ত্রী একতার জন্যে। দুজনই লন্ডনে ছিলেন। দুজনই কর্মজীবী। স্ত্রী মাতৃকালীন ছুটি নিয়েছিলেন। সে সময় দুজনই ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে একতাকে আর চাকরি ছাড়তে হয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রমোশনাল ট্রান্সফার নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ভারতে এসে একতা যখন বাড়িতে থাকতেন, শচীন তখন চাকরি খুঁজতেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থেকেই স্ত্রীকে সহায়তা করেছেন তিনি। কারণ তারা দুজনই দুজনকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। নাভাল কে প্রাথিয়াস্টও চেয়েছিলেন তার স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ হোক। পরিবারের নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি স্ত্রীর ক্যারিয়ারের স্বপ্ন পূরণে সম্মতি দেন। স্ত্রী একটি পিআর ফার্ম পরিচালনা করেন। নাভাল বাড়িতে থাকেন। বাজার করেন, রান্না করেন এবং কাপড় ধোয়ার কাজ করেন। বায়োকনের গ্লোবাল হেড অব কমিউনিকেশনস সীমা আহুজা বলেন, ৯০ এর দশক থেকে নারীরা সুপারওমেন হওয়ার ধারণাকে এগিয়ে নিয়েছেন।

ক্যারিয়ার এবং বাসা সামলানোর কাজে তারাই হয়ে ওঠেন আইকন। কিন্তু স্বামীকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ধীরে ধীরে পুরুষের মানসিকতা বদলে যাচ্ছে। তারা সংসার সামলাতে স্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। তা ছাড়া নারীর এমন সফলতার জন্যে পুরুষের এগিয়ে আসাটাও জরুরি। এমনটাই মনে করেন ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সিনিয়র ম্যানেজার প্রাচী মোহাপাত্রা। কারণ তার সফল ক্যারিয়ারের পেছনে স্বামী ভূমিকা অনস্বীকার্য। একই ঘটনা ঘটেছে নিরু আনন্দের ক্ষেত্রেই। একটি বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। অ্যাক্রিয়েটি ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠায় তিনিও স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।



মন্তব্য চালু নেই