একটি জয়ই ঘুচিয়ে দিতে পারে সমস্ত আক্ষেপ

শায়খ মিশন: ভারতের বিপক্ষে ৩২টি ওয়ানডে খেলে ৫টিতে জয় থাকলেও তাদের বিপক্ষে টেস্টে বা টি-টোয়েন্টিতে কোন জয় নেই বাংলাদেশের। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে ৪ বার ভারতের সাথে দেখা হলেও সবকটিতেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে উদীয়মান বাংলাদেশের অভিধানে ‘অসম্ভব’ শব্দটি যে নেই তার প্রমাণ গত দেড় বছরে বহুবার দিয়েছে বাংলাদেশ। আর নিজেদের মাটিতে ফেভারিট ভারতকে হারলেই বিদায় নিতে হবে বিশ্বকাপ থেকে, এই চাপটাও সঙ্গী হচ্ছে তাদের। তাই আগামীকাল (বুধবার) ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী মাঠে দারুণ একটি ম্যাচই উপভোগ করতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব!

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে সেই ‘মওকা মওকা’ ভিডিও দিয়ে শুরু। তারপর কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেলের বিতর্কিত নো বল কিংবা রিয়াদের ছক্কাকে আউট দেওয়াটা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধই করেছিল আম্পায়ারদের ভূমিকা। তা নিয়ে অবশেষে তৎকালীন আইসিসি প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামালের পদত্যাগে বিষয়টি আরও বড় আকার ধারণ করে। গত বছর ওয়ানডে সিরিজে অভিষিক্ত মুস্তাফিজকে ধাক্কা মেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ভারতের অধিনায়ক ধোনি, জরিমানাও গুনতে হয় তাকে।

সবশেষ এবারের এশিয়া কাপে ‘তাসকিনের হাতে ধোনির কাটা মাথা’ নিয়ে একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে সেই তাসকিন ও সাথে সানির বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণায় ক্রিকেটে ভারতের সাথে বৈরিতা এখন প্রায় তুঙ্গে! এখানেই শেষ নয়। যে মাশরাফির হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বদলে যাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর গতকাল ভারতের সুনীল গাভাস্কার প্রশ্ন তুললেন বাংলাদেশ দলে সেই মাশরাফির কার্যকারিতা নিয়েই! এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রীতিমত তোলপাড় চলছে। তাসকিনের নিষেধাজ্ঞায় ভারত কলকাঠি নেড়েছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে হয়তো বিতর্ক আছে, তবে এদেশের দর্শকদের অবাধ আনন্দের খোরাক জোগাতে পারে ভারতের বিপক্ষে প্রথম বার টি-টোয়েন্টিতে জয়।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি হেরে ইতমধ্যেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ, তাই তাদের সামনে থাকছে নির্ভার ভাবে কোন চাপ ছাড়াই খেলার সুযোগ। অন্যদিকে এই ম্যাচে হারলেই দেশের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হবে ভারতকে, তাই চাপ থাকছে ভারতের উপরই। ভারতের ভয়টা আরও বেশি হওয়ার কারণ, এর আগে এই বাংলাদেশের কাছে হেরেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০১২ সালের এশিয়া কাপের মত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে।

ভারতের দুশ্চিন্তার আরেকটি কারণ হতে পারে মুস্তাফিজের ফিরে আসা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলেও মুস্তাফিজের দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি প্রাপ্তি আছে আরও। ব্যাটে-বলে সাকিবের ছন্দে ফেরা, মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত ফর্মের পাশাপাশি ১৫৬ রানের পুঁজি নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ লড়াই করাটা আশার খোরাক হয়ে থাকবে ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচের জন্য। যদিও তামিমের অসুস্থতা কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে, তবে তার ফেরার সম্ভাবনা আছে পরের ম্যাচেই। পাশাপাশি পরের ম্যাচে দলে সুযোগ মিলতে পারে নাসিরের, ম্যাচ পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সেও সে আভাসই দিলেন অধিনায়ক। তিনি বললেন, এতদিন টিম কম্বিনেশনের কারণেই সুযোগ দেওয়া যায়নি নাসিরকে।

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছিলেন মাশরাফি। তার এই কান্না ছুঁয়ে গিয়েছিল এদেশের অজস্র ক্রিকেট ভক্তদের, ইয়ান চ্যাপেল বা ওয়াসিম আকরামের মত কিংবদন্তিরাও এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভক্তদের মনে তাই জয়ের নেশা, আর টাইগারদের চেষ্টা শোককে শক্তিতে রূপান্তরের। অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা এই চিন্নাস্বামীর মাঠেই কাল বাংলাদেশ খেলতে যাচ্ছে ভারতের বিপক্ষে, টাইগাররা কি পারবে বুকের সমস্ত আগুনকে ঢেলে দিয়ে ভারতকে তাদের মাটিতেই বিশ্বকাপের মত আরও একটি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিতে?

লেখক পরিচিতি : কম্পিউটার প্রকৌশলী



মন্তব্য চালু নেই