একদিনে জঙ্গি নিহতের রেকর্ড

গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের তিনটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনিবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালানোয় একদিনে সর্বোচ্চ ১১ জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ মাসে পরিচালিত অভিযানগুলোয় নিহতের ঘটনায় এই সংখ্য সর্বোচ্চ। এর আগের বড়বড় অভিযানগুলোর মধ্যে হলি আর্টিজানে ৫ জন, কল্যাণপুরে ৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। একাধিক অপরাধ বিশ্লেষক বলছেন, ‘একের পর এক অভিযানের ফলে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে চলেছে। এ কারণে তারা সংগঠিতভাবে থাকার পরিকল্পনা করায় এত জনকে একসঙ্গে পাওয়া গেছে।’

শনিবার গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে র‌্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গাজীপুরের পশ্চিম হাড়িনালে দু’জন ও টাঙ্গাইলের কাগমারায় দু’জন ও গাজীপুরের পাতারটেকে এক আস্তানায় ৭ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এটাই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ নিহতের ঘটনা।

গাজীপুরের পাতারটেকের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান ‘অপারেশন শরতের তুফানে’ ওই আস্তানায় ৭ জঙ্গি নিহত হয়। এ অভিযান প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, সকাল ১০টার দিকে অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিন্তু কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে শেষ পর্যন্ত জঙ্গিরা পরাস্ত হয়।

এর আগে গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে কমান্ডো ‘অভিযান অপরারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মধ্য দিয়ে ১২ ঘণ্টা পর জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে৷ এ ঘটনায় ২০ জিম্মি ও ৬ বন্দুকধারী নিহত হয়েছে বলে জানান সামরিক বাহিনী৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক। তিনি বলেন, ‘অভিযানকারীরা ভেতরে ঢোকার পর ২০ জনের মৃতদেহ পায়৷ এছাড়া অভিযানে ৬ জন হামলাকারী নিহত হয় এবং একজনকে আটক করা হয়।’

এরপর (২৬ জুলাই ভোর রাতে) রাজধানীর কল্যাণপুর পুলিশের অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। একজনকে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশ। একজন পালিয়েছে। এর বাইরেও কল্যাণপুরের সেই জঙ্গি আস্তানায় আরও ৮ জঙ্গি ছিল বলে গ্রেফতার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে। মিরপুর থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলাতেও উল্লেখ রয়েছে বিষয়টি। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই ৯ জন ওই আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। তাদের মধ্যে আইএসের অনুসারী জেএমবির একাংশের মাস্টারমাইন্ডদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীও যাতায়াত করত। যে পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের অপারেশনে নিহত হয়।’

২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় চালানো অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়। তাদের মধ্যে গুলশানে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ছিল। সকাল সাড়ে নয়টার পর ভবনের কাছ থেকে প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এরপর থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। ঘণ্টাখানেক পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় চিহ্নিত জঙ্গি তামিমসহ তিনজন নিহতের পর ওই সময় বলেছেন, ‘একের পর এক আক্রমণে তারা নতুন করে সংগঠিত হতে চাইবেই। সেই জায়গা থেকে তাদের স্ট্র্যাটেজিতে কিছু ভুল সংযোজিত হওয়া স্বাভাবিক। সেই সুযোগটা নিতে পারলেই সফল অভিযান সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘একের পর এক অভিযানের কারণে জঙ্গিরা যত নিজেদের একসঙ্গে সংগঠিত করে রাখতে পারে সেই চেষ্টাও আছে।’



মন্তব্য চালু নেই