রাজনীতি নিয়ে আলাপ করেছে বিএনপি

একান্তে বৈঠক খালেদা-মোদির

একান্তে বৈঠক করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ঢাকা সফররত নরেন্দ্র মোদি। রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় আধাঘণ্টা।

এর আগে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একই স্থানে বৈঠক করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বিকেল ৪টায় রওশন-মোদি বৈঠক শেষ হওয়ার পরই খালেদার সঙ্গে বৈঠকটি শুরু হয়।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে বিকেল পৌনে ৪টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঢোকেন খালেদা জিয়া। বেগম জিয়ার সঙ্গে হোটেলে যান বিএনপির তিন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান ও তরিকুল ইসলাম। এছাড়া আরো রয়েছেন চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও রিয়াজ রহমান। খালেদা জিয়াসহ এদের মধ্যে পাঁচজন মোদির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত আছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশাসহ দেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট চলছে- এমন চিত্র দেখিয়ে তা থেকে উত্তোরণে ভারত সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন খালেদা জিয়া।

মোদির সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলাপ করেছে বিএনপিখালেদা-মোদি

ঢাকায় সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি করেছে। বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে কোনো দেশেই উন্নয়ন টেকসই হবে না।

মেদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।

তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের নেত্রী তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। অন্যদিকে মোদি তার বক্তব্য দিয়েছেন। অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশে পারস্পারিক স্বার্থে খোলা মনে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে তার মধ্যে দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সেটা করতে হলে দুদেশের মানুষের উন্নয়নের বিষয়ে জোর দিতে হবে। কোন সরকার ক্ষমতায় আছে বা নেই তার ভিত্তিতে নয়। কারণ সরকার আসবে যাবে।

আঞ্চলিক উন্নয়নে গণতন্ত্রে জোর দেয়ার আহ্বান বিএনপির

মঈন খান জানান, পারস্পরিক সম্পর্ক, সার্কভুক্ত দক্ষিণ এশীয় দেশের উন্নয়ন এবং দেশে বর্তমান গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক নয় দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা মনে করি, দীর্ঘস্থায়ী আস্থার সম্পর্ক ধরে রাখতে হলে দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি বিষয়টিও তাকে অবহিত করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন। যদি টেকসই উন্নয়ন করতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটা গণতান্ত্রিক হতে হবে। যদি না গণতন্ত্র থাকে, যদি না বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়, যদি না নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, যদি না মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে তাহলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা এসব বিষয়েই মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

 

হোটেল সোনারগাঁওয়ে খালেদা জিয়া

সব সংশয় ছাপিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে পৌঁছান তিনি। বিএনপি প্রধানের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ রয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি- চলমান পরিস্থিতির ওপর ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেবেন বেগম জিয়া। বিএনপির প্রতি সরকারের ‘দমনমূলক’ আচরণ, দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, খুন, হয়রানি এবং ওই নির্বাচনে ভারতের অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন তিনি। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্যও মোদির হাতে তুলে দেওয়া হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে অবস্থান নিতে মোদি সরকারকে অনুরোধ করবেন বিএনপি নেত্রী।

Khalada1433671583এ ছাড়া তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি যাতে দ্রুত সমাধান হয় সে বিষয়েও মোদিকে অনুরোধ করবেন তিনি। পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তিসহ অন্যান্য চুক্তি সই হওয়ায় মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবেন বিএনপি প্রধান। বৈঠকে বিএনপির একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, খুন-গুম ও গ্রেফতার-হয়রানির বিষয়গুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া। ভারতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গটিও মোদি-খালেদা বৈঠকে উঠে আসার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্র।

এদিকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল কোনো পদে বা বিরোধী দলে না থাকায় মোদির সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সময় থাকবে কি না- তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বৈঠক হওয়ায় খুশি দলটির নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, এই বৈঠক বিএনপির রাজনৈতিক টার্নিংপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি হরতালের অজুহাতে বাতিল করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে ভুল করেছিলেন তা শোধরাতে চান তিনি। পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করতে সব ধরনের প্রতিশ্রুতিও দেবেন বিএনপি প্রধান।

হোটেল সোনারগাঁওয়ে খালেদা জিয়া



মন্তব্য চালু নেই