একা মায়েরা খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলো

ভালবেসে সারা জীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঘর বাঁধেন দু’জন মানুষ। কিন্তু সে ঘর সবসময় টেকে না। জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করার কোন মানেও নেই। অনেকেই তাই বেছে নেন একলা জীবন। সে জীবন পুরুষের জন্য যতটা কঠিন তার চেয়েও বেশী কঠিন নারীর জন্য। সামাজিক আর্থিক প্রেক্ষাপটের কারণেই হয় এই পার্থক্য।

স্বামীর কাছ থেকে পৃথক হয়ে সন্তানকে নিয়ে একাই সাজিয়েছেন ঘর? অভিনন্দন আপনাকে নতুন জীবনে। সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে মনে রাখার মত সহায়ক কিছু পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য এই ফিচার-

নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিন
আপনি এখন একা থাকছেন, কিন্তু দায়িত্ব আপনার কাঁধে দু’জনের। আপনি অবশ্যই এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন একটু পরিকল্পনার। আপনার চাকরি বা ব্যবসায় কখন কতটা সময় দেবেন, শিশুকে কখন সময় দেবেন, কীভাবে দেবেন এই সবই রুটিন করে ফেলুন। আপনার মস্তিষ্কে অনেক পরিকল্পনাই থাকতে পারে, কিন্তু এভাবে করা পরিকল্পনা কাজের সময়ে মনে থাকে প্রায়শই। লিখে ফেলুন। নিজের জীবনকে একটি ছকে নিয়ে আসুন।

পরিচ্ছন্নতা তৈরি করুন
আমাদের সমাজটা মানুষের পেছনে কথা রটিয়ে বেড়াতে খুব পছন্দ করে। আপনাকে প্রশ্ন করার সাহস হয়ত অনেকেই করবেন না বা করলেও আপনি ঠিক সামলে নেবেন। কিন্তু শিশুকে স্কুলে, খেলার মাঠে নানান প্রশ্ন করা হতে পারে। তার বাবা কোথায়, কী সমস্যা ছিল এধরণের প্রশ্ন করে শিশুকে বিব্রত করতে পারে এমন মানুষের অভাব নেই। তাই শিশুর স্কুলে, আপনার কর্মক্ষেত্রে স্পষ্ট জানিয়ে দিন বিষয়টি আপনার ব্যক্তিগত এবং শিশুকে এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন যেন না করা হয়। নিজের স্বচ্ছতা তৈরি করুন। সাহসিকতার সাথে নিজের পরিচয় দিন। শিশুকেও জানিয়ে রাখুন স্পষ্ট করে। তার মনে যেন কোন দ্বিধা দ্বন্দ না থাকে।

ভালবাসা প্রদর্শন করুন
অনেকে আছেন, সন্তানকে বেশীরভাগ সময় শাসন করাকে বেছে নেন তাকে মানুষের মত মানুষ করার উপায় হিসেবে। তারা মনে করেন, কঠোরতাই একমাত্র উপায়। আবার জীবনের কঠিন সংগ্রামগুলোও তাদের উপর এমন একটা নেতিবাচক প্রভাবে ফেলে যে তারা শক্ত চরিত্রের মানুষে পরিণত হোন। কিছু বিষয় ভেবে দেখুন। আপনার সন্তান আপনার মাঝেই খুঁজছেন তার বাবা এবং মা উভয়কেই। আপনি যদি তার সাথে কঠোর ব্যবহার করেন সে ভাবতে শুরু করবে তার কেউ নেই, তাকে কেউ ভালবাসে না। শৈশবে যার মনে এই ভাবনা গেঁথে যায় বড় হলেও সে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। আপনার ভালবাসা আপনার শিশু যেন দেখতে পায়। তার মাঝে যেন কোন সংশয় জায়গা করে নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

অপরাধবোধ থেকে বেরিয়ে আসুন
মানুষের মনস্তত্ব খুবই জটিল। একসাথে থাকা সম্ভব নয় বলেই একটি জুটি আলাদা হয়ে যায়। তবু একসময় তারা নিজেকে দোষারোপ করতে থাকেন। ভাবেন, ‘আমার জন্যই সন্তানটি বাবা-মা দুজনের ভালবাসা পেল না’। এই আত্মগ্লানি আপনার জীবনকে জটিল করে তুলবে। যা হবার হয়ে গেছে। মনকে মুক্ত করে দিন। স্বাধীনভাবে বাঁচুন। ভুলে যান কী হতে পারত। ভাবুন, আগামীটা সম্পূর্ণই আছে আপনার নিয়ন্ত্রণে।

শিখুন
একটি শিশুকে বড় করা কম বড় দায়িত্ব নয়। শিশু মনস্তত্ত্ব এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করুন। আপনি যখন চাকরি করতে বাসার বাইরে যাচ্ছেন তখন আপনার শিশু হয়ত অনেকটা সময় একা বাসায় থাকছে। সে বিষন্নতাগ্রস্থ হতে পারে বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মাঝে। আবার এরকম কিছু নাও হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন প্রতিনিয়ত এই বিষয়গুলো জানবেন, শিখবেন আপনি আপনার শিশুকে যতটা চমৎকারভাবে গড়ে তুলতে পারবেন ততটা পারবেন না আর কেউই।

তুলনা করা বন্ধ করুন
কোনভাবেই কখনো নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। আপনার পরিবারকে অন্য পরিবারের সাথে মিলিয়ে মন খারাপ করবেন না। আপনি আপনার সন্তানকে কতটা সুবিধা দিতে পারছেন সেটাও আর কারও সাথে মিলিয়ে দেখার কোন প্রয়োজন নেই। একটি শিশুকে কতটা সুযোগ সুবিধা, অধিকার দিয়ে বড় করা উচিৎ তার মাপকাঠি আরেকটি পরিবার নয়। সেজন্য শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। পরিবার বিষয়ক কাউন্সিলরের সাথে কথা বলতে পারেন। অভিজ্ঞ মত নিন, অন্যের মত নয় এবং একইসাথে নিজের তুলনামূলক মনমানসিকতা প্রসূত মতও নয়। এতে শুধু আত্মবিশ্বাস কমবে, ভাল কিছু হবে না।

ইতিবাচক হোন
ইতিবাচকতা করতে পারে অনেক সমস্যায় সহজ সমাধান। আপনার শিশু কেমন পড়াশোনা করছে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে এই প্রতিটি বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। এখন পর্যন্ত আপনি লড়ে এসেছেন সফলভাবে, ভবিষ্যতেও সফল হবেন। আপনার সাহসিকতার জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিন।



মন্তব্য চালু নেই