এক স্কুলছাত্রীর হাত ধরেই বদলে গেলো গোটা গ্রাম

সদ্য স্কুল শেষ করে বেরিয়েছিল মেয়েটি। তখনও তার সত্ত্বা থেকে মুছে যায়নি স্কুলপড়ুয়া তকমাটা! অন্তত, হাবে-ভাবে তা কিছুটা হলেও ছিলই! কিন্তু, তার চিন্তাভাবনার ধরন যে লজ্জা দিতে চলেছে অনেক প্রাপ্তবয়স্ককেই, সেটা তখনও ঠাহর করা যায়নি!

দিয়া শাহ নিজেও জানত না, তার জীবন কী ভাবে মিশে যেতে চলেছে অন্য জীবনের বৃহত্তর স্রোতে। ‘স্কুল শেষ করে বেরিয়ে বাদ বাকি সবাই যা করে, আমিও তাই করছিলাম। যাতে একটা ভাল চাকরি পাই, সেই জন্য একটু জোরদার করতে চাইছিলাম নিজের সিভিটাকে। তাই ইনটার্ন হয়ে একটা এনজিও-তে কাজ করতে ঢুকলাম’, জানিয়েছে দিয়া।

প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ কেটে যায় ডেস্কে বসে থেকেই! হঠাৎই একদিন অফিসে গিয়ে জানতে পারে দিয়া, তাকে একটা গ্রামে যেতে হবে সমীক্ষার কাজে। গ্রামের নাম খামগাঁও। তখনও দিয়া জানত না, ভারতের মহারাষ্ট্রের খামগাঁওয়ের সঙ্গে কী ভাবে জড়িয়ে যাবে তার জীবন।

‘গ্রামে গিয়ে দেখি, ওখানকার মানুষদের ইংরেজি বলতে না পারা নিয়ে একটা কুণ্ঠা আছে। আমি এসেছি শহর থেকে। ওরা তাই ভেবেছিলেন, আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। তাই সমীক্ষার প্রশ্নগুলোর উত্তরে কিছুই বলতে চাইছিলেন না। লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে ছিলেন। তখনই ঠিক করে ফেলি, আমি এঁদের ইংরেজি শেখাব’, দিয়ার বক্তব্য।

বাকিটা গল্পের মতোই! অফিস দিয়াকে এই কাজে সম্মতি দেয়। দিয়াও তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে আসে খামগাঁওতে। নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এবং জানতে পারে, সারা গ্রাম ইংরেজি শেখার জন্য কী ব্যাকুল আগ্রহেই না অপেক্ষায় ছিল!

দিন-রাত এক করে প্রায় মাস তিনেক খামগাঁওবাসীকে ইংরেজি শিখিয়েছে দিয়া। তিনটে ব্যাচ পড়াত সে- বাচ্চাদের, ঘরের মেয়েদের আর কলেজপড়ুয়াদের। ‘সারা দিন ধরে পড়াতাম। রাতে খেতে বসার সময়েও রেহাই ছিল না। সবাই, বিশেষ করে বাচ্চারা ছেঁকে ধরত। জানতে চাইত, দিদি টেন্সটা ঠিক আছে তো? নানা প্রশ্ন করে জেরবার করে দিত’, হাসতে হাসতে জানিয়েছে দিয়া।

এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় মাসগুলো। আবার শহরের জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছায় দিয়া। ‘যখন চলে আসছিলাম, গোটা গ্রাম একসঙ্গে আমায় বিদায় দিতে এগিয়ে এসেছিল কিছু দূর! ঠিক যেন গ্রামের মেয়ে বিয়ের পর গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, দারুণ একটা ফেয়ারওয়েলও পেয়েছিলাম আমি। গ্রামবাসীরা ইংরেজিতে একটা ভাষণ দিয়েছিল। বলেছিল, আমরা তোমায় ভুলব না’, বিদায়বেলার স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত হল দিয়া! দিয়াও অবশ্য তাদের ভুলবে না। হলফ করে বলাই যায়!



মন্তব্য চালু নেই