এগিয়ে আসছে রোয়ানু, প্রস্তুত ১৭০ সাইক্লোন শেল্টার ও শতাধিক মেডিক্যাল টিম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষা করতে খুলনার নয়টি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৭০টি সাইক্লোন শেল্টার।

একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলায় শতাধিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

বর্তমানে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্যোগ দেখা দিলে উদ্ধার তৎপরতার জন্য রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিসহ (সিটিপি) সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আর জেলা কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে খুলনায় শুক্রবার দিনভর হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দক্ষিণাঞ্চলের মংলা সমুদ্রবন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত এবং উপকূলীয় এলাকায় ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উঁচু হয়ে জলোচ্ছ্বাসের আশংকা রয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখার সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর সংকেত পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। একই সঙ্গে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। রোয়ানু থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষা করতে খুলনার নয়টি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৭০টি সাইক্লোন শেল্টার। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত সাইক্লোন শেল্টারগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারের প্রতিটিতে কমপক্ষে ৭০০ করে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার লোক আশ্রয় নিতে পারবে।

এদিকে খুলনার উপকূলবর্তী কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা এলাকায় মাইকিং করে এবং ওয়াকিটকি ও ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ছুটির দিন থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে শুক্রবার সকাল থেকে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দফায় দফায় জরুরি সভা করা হচ্ছে। সরকারি সকল দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিটিপি) এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দুর্যোগকালীন করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জন ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে জেলায় শতাধিক মেডিক্যাল টিম গঠন করে তাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (পাবলিক হেলথ) পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার, ভ্রাম্যমাণ টিউবওয়েল এবং পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ৫০ হাজার বড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম মান্নান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষা করতে খুলনার নয়টি উপজেলায় সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকল বিভাগের লোকবল প্রস্তুত রয়েছে। এখন অপেক্ষার পালা চলছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোনো ধরনের দুর্যোগ আঘাত হানলেও ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে আশা করছি।’

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আযাদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে খুলনায় শুক্রবার দিনভর হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মংলা সমুদ্র বন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত এবং উপকূলীয় এলাকায় ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উঁচু হয়ে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই