এবার ফুটপাতের দখল ছাড়ল রাশিয়া ও সৌদি দূতাবাস

সিটি করপোরেশনের চাপের মুখে ঢাকার কূটনৈতিক এলাকার সড়কের ফুটপাত থেকে নিরাপত্তা স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া ও সৌদি আরব দূতাবাস।

বৃহস্পতিবার ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটপাতের দখল ছাড়ে এই দুটি দূতাবাস। অভিযানের সময় রাশিয়া দূতাবাসের ঘিরে রাখা ১৪০টি কংক্রিট প্লান্টার ও লোহার বেষ্টনী সরিয়ে নেয়া হয়।

স্থাপনা সরানোর সময় মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছায় ফুটপাতের দখল ছাড়েনি। বরং চিঠি দিয়ে এবং একাধিকবার কথা বলে সমঝোতার মাধ্যমে এসব ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে।

আনিসুল হক বলেন, ‘রাশিয়া দূতাবাস ৭৯ নম্বর সড়ক এবং ৮৩ নম্বর সড়কের সব ফুটপাতসহ গুলশান নর্থ এভিনিউয়ে ফুটপাত পরবর্তী মূলসড়কের ভেতরে ৩ ফুট এবং ৮৩ নম্বর সড়কের ফুটপাত পরবর্তী মূল অংশের ভেতরে সাড়ে নয় ফুট এলাকাজুড়ে কংক্রিট প্লান্টার ও লোহার বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিল। স্থাপনাগুলো সরানোর ফলে এসব ফুটপাত দিয়ে পথচারীর হাঁটার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মেয়র বলেন, ‘বিদেশি দূতাবাসগুলো জেনে না জেনে তাদের পাশের ফুটপাত ও রাস্তা দখল করেছিল। সমঝোতার পর বেশ কয়েকটি দূতাবাসের স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়। আজ রাশিয়া ও সৌদি দূতাবাসের পাশের ব্লকগুলো তুলে নেয়া হচ্ছে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখব। তারা চাইলে আমরা আবারো তাদের ব্লক বসিয়ে দিব। তবে সেটা এমনভাবে বসাবো যাতে ব্লকও থাকবে এবং মানুষের চলাচলের পথও থাকবে। এখন রাশিয়ান দূতাবাস যেমন দশ কাঠার মতো জায়গা দখল করে রেখেছে, তখন তেমনটি থাকবে না।’

নিরাপত্তা বেষ্টনীর অজুহাতে বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের সংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তা দখলের করে জনগণের চলাচল বন্ধ করে দেয় অনেক বছর আগে থেকেই। আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সৌদিসহ বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের পাশের ফুটপাতসহ মূল সড়কের অনেক জায়গা দখল করে রাখে। এসব ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে হাটতে দিত না দূতাবাসের বাইরে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা।

জনগণের হাটার পথ উন্মুক্ত করতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাধ্য হয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালি দূতাবাসকে চিঠি দেয় ডিএনসিসি। এসব দূতাবাসকে ১ মার্চ থেকে এক মাসের মধ্যে ফুটপাতের দখল ছাড়তে বলা হয়।

চিঠি পাওয়ার পর ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তাদের দখল ছেড়ে দেয়। বাকি দূতাবাসগুলো দখল না ছাড়ায় ডিএনসির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। এছাড়া অন্য সব দূতাবাসগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। পরে ১১ এপ্রিল ইতালি ও পাকিস্তান দূতাবাস তাদের দখল ছেড়ে দেয়। এছাড়া যেসব দূতাবাস দখল ছাড়েনি সেদিন তাদের দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়।

এদের মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবও ছিল। এরই প্রেক্ষিতে রাশিয়া ও সৌদি দূতাবাস দখল ছাড়তে সম্মতি জানালে আজ তাদের দখলে থাকা স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়।

এখনো জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং তুরস্ক দূতাবাস তাদের কম্পাউন্ডের বাইরের ফুটপাতের দখল ছাড়েনি। আস্তে আস্তে তাদের স্থাপনাও সরানো হবে বলে মেয়র আনিসুল জানান।

ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র বলেন, ‘কিছু দূতাবাস ইতোমধ্যে আমাদের কথা শুনে ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে দিয়েছে। আবার কিছু দূতাবাস আছে যারা এখনো দখল ছাড়েনি। তাদেরও আস্তে আস্তে পরিষ্কার করা হবে। জনগণের চলাচলের রাস্তা তারা দখল করে রাখতে পারবে না।’

দখল উচ্ছেদের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জেনারেল মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।



মন্তব্য চালু নেই