এবার রংপুরে তিন বৃক্ষমানবের সন্ধান

খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজানদার এবং ভোলায় আলমগীর মনিরের পর এবার রংপুরে সন্ধান পাওয়া গেল আরও তিন বৃক্ষমানবের। তারা হলেন বাছেদ, রুবেল ও তাজুল। এছাড়াও একই রোগে আক্রান্ত আরও দুজন মারা গেছেন। তারাও ওই পরিবারের সদস্য। মঙ্গলবার তাদের রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

তিন বৃক্ষমানবের চিকিৎসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জিয়াউর রহমান, অর্থোপেডিকস্ বিশেষজ্ঞ এনামুল বাশার, ডা. মুনিরা বেগম, উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমানের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, তারা হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দুই একদিনের মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।

জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে আফান মুন্সির হাত ও পা প্রথমে এ রোগে আক্রান্ত হয়। তার দুই ছেলে বাছেত মিয়া ও তাজুল ইসলাম এবং কন্যা সাফিয়া খাতুনও একই রোগে আক্রান্ত হয়। সাফিয়া মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রায় ১০ বছর আগে মারা যায়। এরপর তাদের বাবা আফান মুন্সিও মারা যান ৭৫ বছর বয়সে।

এদিকে তাজুলের দুই সন্তানের মধ্যে রুবেল মিয়াও এ রোগে আক্রান্ত। জন্মের পর তার হাত ও পায়ে এ রোগ দেখা দেয়।

চিকিৎসকরা জানান, রুবেলের ডান চোখের নিচে ও ভ্রুর উপরে এবং কপালের বেশকিছু অংশে গাছের পাতার মতো নীলিমা-কালচে রং ধরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিরল রোগে আক্রান্ত ওই পরিবারের সদস্যরা জানান, তাজুল ইসলাম জন্মের পর থেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বংশ পরম্পরায় তারা এ রোগে ভুগছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাজুল ইসলাম বলেন, তার বাবা আফাস মুন্সি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বড়ভাই বাছেদ আলীও এ রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন আগে তার দুই পা কেটে ফেলা হলেও হাতে গাছের মতো গজানো শিকড় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাছেদ।

তাজুল ইসলাম আরও জানান, তিনি তার বাবার কাছে শুনেছেন জন্মের দুই মাস পরই তার হাত ও পায়ের নখগুলো বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে তা গাছের শিকড়ের মতো বের হয়ে আসে। দিন যতই গড়ায় নখগুলো ততই বড় হয়। তার দুই ছেলে রুবেল মিয়া (১২) ও রুহুল আমিন (১০)। রুবেল সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও রুহুল আমিন হাত ও পায়ে বড় বড় নখ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এখন রুহুল যতই বড় হচ্ছে শিকড়ের মতো গজানো নখগুলোও বড় হচ্ছে। তারা বাবা-ছেলে কখনোই নিজ হাতে খেতে পারেন না।

তাজুল ইসলাম জানান, রোগটি জন্মগত হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। এ কারণে তিনি বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তিকে। ছেলে রুহুল আমিনও তার মতো এই পেশায় জড়িত।

চিকিৎসকরা বলেন, হাত দুটো কোনো রকম নাড়াচাড়া করতে পারলেও পা দুটোর ওজন অনেক। উঁচু করতে কষ্ট হয়। হাতের চেয়ে পা দুটোর অবস্থা খুব খারাপ। হাত ও পায়ের নখ কাটলেই রক্ত বের হতে থাকে।

এ ব্যাপারে অর্থোপেডিকস্ বিশেষজ্ঞ এনামুল বাশার বলেন, আপাতত বিরল রোগটিকে প্রকৃতির ‘হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস’ ভাবছি। পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়া কিছুই বলা সম্ভব না।



মন্তব্য চালু নেই