এবার রিজার্ভ ব্যাংককে শুনানিতে ডেকেছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাটের বিস্তারিত জানতে চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ককে চিঠি দিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতা ক্যারোলিন ম্যালোনি। একইসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কংগ্রেসের ফিনানশিয়াল সাব-কমিটির গোপন শুনানিতে উপস্থিত হয়ে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। তবে শুনানির দিনক্ষণ নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

নিউইয়র্ক রাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট দলের আইনপ্রণেতা ও কংগ্রেস ফিনানশিয়াল সাব-কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ক্যারোলিন ম্যালোনি ওই চিঠিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট কোড ব্যবহার করে অর্থ প্রদানে পাঠানো ৩০ থেকে ৩৫টি নির্দেশনা আটকে দেয়া সম্ভব হলো কিন্তু প্রথম ৫টি কেন আটকানো গেল না।

রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাটে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গেল সপ্তাহে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতায় অর্থ লোপাটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ অর্থের ৮১ মিলিয়ন পাঠানো হয় ফিলিপাইনে রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখার চার অ্যাকাউন্টে।

বাকী ২০ মিলিয়ন পাঠানো হয় শ্রীলংকায় বেসরকারি সংগঠন শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে। কিন্তু প্রাপকের নামের বানানে ভুল থাকায় পেমেন্ট আটকে দেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

সন্দেহভাজন শালিকা ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালকের বিদেশ ভ্রমনের উপর শ্রীলংকার আদালত নিষেধাজ্ঞা জারির পর নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংককে এ বিষয়ে শুনানিতে ডাকলেন কংগ্রেসম্যান ক্যারোলিন ম্যালোনি। শ্রীলংকা পুলিশ আদলেতের এ নির্দেশনা দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগকে জানিয়ে বলেছে, অভিযুক্তরা ব্যাংকে পাঠানো লোপাটের ২০ মিলিয়ন ডলার তুলে নেয়ার কথা ছিল।

কলম্বোর চিফ ম্যাজিস্ট্রেট জিহান পিলাপিতিয়া গত সোমবার বেসরকারি এ ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালককের বিদেশ যাওয়ার উপর নিষধাজ্ঞা আরোপ করেন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশের দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

পুলিশ আদালতকে বলেছে, ২৮ জানুয়ারি কলম্বোর একটি বেসরকারি ব্যাংকে শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। খোলার ৬ দিন পর ওই অ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা হয়। প্রাপক প্রতিষ্ঠানের নামের বানানে ভুল থাকায় পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্মকর্তারা।

আদালতে দেয়া রিপোর্টে পুলিশ বলেছে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলম্বোয় একটি বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলানো ছাড়া ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগের আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম দাদলেকে লেখা চিঠিতে কংগ্রেসম্যান ক্যারোলিন ম্যালোনি বলেছেন, অর্থ লোপাটে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের উপর বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাস নড়বড়ে করবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনে নিরাপত্তা ও নির্ভরতায়ও সংকট সৃস্টি করবে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন কংগ্রেসম্যান।
চিঠিতে তিনি আরো জানতে চান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ স্থানান্তরে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠানো ৩৫টি আদেশ পুনঃনিশ্চিতের অনুরোধ জানিয়েও তা পাওয়ার আগেই কেন প্রথম ৫টি আদেশের বিপরীতে অর্থ ছাড়ের অনুমতি দেয়া হল।

বুধবার ফেডারেল ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কংগ্রেসওমেনের মনোভাব অনুধাবনের চেষ্টা করছি এবং তার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।’

বিবৃতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘আমাদের সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে এ অর্থ লোপাট হওয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আরো বলেছে, ‘অর্থ লোপাটের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই