এবার হয়তো বাংলাদেশে যেতে পারব : বাহামনি

ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘স্টার জলসা’র ‘ইষ্টিকুটুম’ সিরিয়ালের ‘বাহামনি’ তিনি। অভিনয় করেছেন ‘ধন্যি মেয়ে’ সিরিয়ালেও। বর্তমানে ‘কালারস বাংলা’ চ্যানেলে ‘মা সুপার কিড’ শো’-এর উপস্থাপনা করছেন। আসল নাম রণিতা দাস হলেও দর্শকরা তাঁকে ‘বাহা’ নামেই চেনেন।

এনটিভির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতেই ‘বাহা’ বললেন, এখানকার স্টার জলসা হোক বা কালারস বাংলা চ্যানেল হোক বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় সেটা জানি। আমি বহু অনুষ্ঠানের অফার পেয়েছিলাম বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু টানা মেগা ধারাবাহিকের যা শুটিং থাকে, তাতে করে ঠিক যাওয়া হয় না। ইচ্ছে তো আছে বাংলাদেশে যাওয়ার। এবার হয়তো যেতে পারব।’

এককথায় বললে ভীষণ মিষ্টি মেয়ে বাহামনি/বাহা বা রণিতা। এবারে ধীরে প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢুকলাম, বাহামনি বলে ডাকব নাকি সুপার মম?

হেসে হাল্কা করে জিহ্বা দাঁতে কেটে বললেন, ‘এই রে! আবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ব। প্লিজ এমনটা করবেন না।’

বললাম, আপনি শুধু পশ্চিমবাংলারই নন, বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সেটা জানেন?

ফের হাসতে হাসতে চোখ দুটোকে বেশ গোল্লা গোল্লা করে বাহা বললেন, ‘অনেক অনেক ধন্যবাদ বাংলাদেশের প্রতিটি দর্শককে। এই দেখুন টেলিভিশন মারফত কেমন সবার সঙ্গে সবার বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়!’

পরের প্রশ্ন, কলকাতার বাংলা ইন্ড্রাস্ট্রির সবাই বলে আপনি নাকি খুব সাহসী? এত দিন স্টার জলসায় বাহামনি চরিত্রে অভিনয়ের পর এবার কালারস বাংলার সুপার কিডের জবরদোস্ত হোস্ট …

রণিতা বললেন, ‘আমি নন ফিকশনের প্রতিযোগী ছিলাম একটা সময়। তখন তো আর অ্যাঙ্করিং করিনি। এখন কালারস চ্যানেলে ‘মা সুপার কিড’-এর অ্যাঙ্কর। সব থেকে ভালো দিক হলো, ছোট ছোট বাচ্চাদের থেকে খুব পজেটিভ এনার্জি পাচ্ছি। এটা একদম অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। মা সুপার কিডের বিষয়টাই হলো, মা ও বাচ্চার মধ্যকার বন্ডিং। দারুণ ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। আমার ফেসবুক দেখলেই বুঝবেন কত মানুষের পছন্দ হয়েছে এই মেগাটি। বাংলাদেশ থেকেও বহুজন আমায় ফেসবুকে জানিয়েছে, তাদের ভালো লাগার কথা।’

সুযোগ পেয়ে প্রশ্নটা করে ফেললাম, জনপ্রিয় সিরিয়ালের বাহামনি চরিত্র থেকে হঠাৎ সরে দাঁড়ালেন কেন?

উত্তরে বেশ সিরিয়াস রণিতা। বললেন, ‘বাহামনি চরিত্র থেকে সরে যাওয়ার একটা আফসোস তো রয়েছেই। ক্যারিয়ারে বাহামনি আমাকে অনেকটাই মাইলেজ দিয়েছে। আসলে ওই সময়টা আমার জীবনের খুব কঠিন সময় ছিল। জীবনে এমন কিছু সময় আসে না, যখন অনেক ক্ষেত্রে জোর করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়? সেই রকমই সময় ছিল ওটা। সেই সময় আমি পরীক্ষার জন্য ছুটি নিয়েছিলাম। ফিরে এসে আবার শুটিং শুরু করব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু তারপর দেখলাম, টানা তিন বছরের চূড়ান্ত প্রেশারে আমার শরীরটা একদম খারাপ হয়ে গেছে। অনেক রোগ ধরা পড়েছে। শিরদাঁড়ার সমস্যা ছিল ভীষণ। স্ট্রেস, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ডবল শিফট শুটিং, এসবের জন্য খুব মোটা হয়ে যাচ্ছিলাম।বিশ্রাম না নিলেই চলছিল না।’

খানিকটা থেমে প্রশ্ন করলাম, শোনা যায় একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে নাকি বোর হয়ে গিয়েছিলেন?

রণিতা বললেন, “এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। আমার প্রথম মেগা ধারাবাহিক যিশু দাশগুপ্তের ‘নাচবে রাধা’। সেখানে একটা ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করি। তারপর স্টার জলসা চ্যানেলে ‘ধন্যি মেয়ে’। খুব হিট হয়ে যায়। এরপর আবার স্টার জলসার ‘ইষ্টিকুটুম’। দুটো মেগা ধারাবাহিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা একদম আলাদা। ‘ইষ্টিকুটুম’ প্রায় তিন বছর ধরে টানা চলেছে। খানিকটা সত্যি বলতে কি, কাজটা ভালোভাবে আর করতে পারছিলাম না।”

বললাম, তবে দর্শক কিন্তু রণিতাকে নয়, বাহাকে মিস করছে। এ কথা শুনে প্রথমে একচোট হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, “আমায় কিন্তু দর্শকরা মিস করছেন না আর। কারণ তাঁরা আমায় ভালোবাসেন। আমার কাজকে ভালোবাসেন। যাঁরা আমার ফ্যান-ফলোয়ার তাঁরা এখন ‘মা সুপার কিড’-এর দর্শক বলেই আমার ধারণা। তাই রণিতাকে কেউ মিস করছে না, হি হি …।”

পরের প্রশ্ন, মা সুপার কিডের অ্যাঙ্কার আপনি। অন্যদিকে, বিভিন্ন চ্যানেলের হিট রিয়ালিটি শোতে অ্যাঙ্করিং করছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তীরা। কতটা চাপে আছেন?

রণিতার কাছে জবাব যেন প্রস্তুতই ছিল, ‘আপনি বোধহয় আরো একজনের নাম ভুলে গেলেন। বাংলার মহারাজ, আমাদের দাদা সৌরভ গাঙ্গুলি। প্রথমেই বলে দেই, আমি কাজের ক্ষেত্রে চাপ নেই না। মিঠুনদা, রচনাদি যে বয়সে এবং যে সাফল্যের শিখরে এসে অ্যাঙ্করিং করছেন আমি তার ১০ শতাংশেও পৌঁছাতে পারিনি। আমার বয়েসের কেউ-ই কিন্তু এই বয়েসে অ্যাঙ্করিং করতে আসেননি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার ওপর প্রযোজকরা ভরসা রেখেছেন। আমি কাজটা মন দিয়ে করছি। নিজের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি আমি সফল হবো। ফলে নো চাপ, নো টেনশন বস, হি হি হি…।’

জানতে চাইলাম, আপনার মা-বাবা আপনার বয়ফ্রেন্ড সৌপ্তিক আপনার কেরিয়ার নিয়ে কিছু পরামর্শ দেন না?

রণিতা রাখঢাক করলেন না, ‘আমার মা-বাবা খুব লিবারেল। আমার ওপর কিছু চাপিয়ে দেন না। আমি অভিনয় বা অ্যাঙ্করিংয়ের কাজটা খুব শখে করি। আর সৌপ্তিক নিজেও খুব প্রোফেশনাল। তাঁর মতে কাজটা এনজয় করতে না পারলে ছেড়ে দাও। আমি মনে করি, আমি ক্লান্ত থাকলে আমার দর্শকও আমাকে দেখলেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই না? ফলে কাজটায় বোর লাগলে কখনই তা করা উচিত নয়।’

আপনাকে কি আর কখনো মেগাতে দেখা যাবে না?

ঝটপট রণিতা বললেন, ‘অবশ্যই দেখা যেতে পারে। ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না। তবে এখনই নয়। কেননা, মেগার শুটিংয়ের ধকল আমি নিতে পারছি না। দিনে টানা ১৬ ঘণ্টা শুটিং, এটা প্রচণ্ড হেকটিক শিডিউল। তাই নন-ফিকশন করছি। দেখা যাক কী হয়।’

টেলিভিশন তো হলো, এবার কি সিনেমা?

হাসতে হাসতে ‘বাহামনি’ বললেন, ‘অফকোর্স। আমি ভালো চরিত্রে কাজ করতে চাই। সিনেমার জন্য সময় বের কর নিতে পারব। কারণ নন ফিকশনে সারা মাসে ১০-১৫ দিনের বেশি কাজ থাকে না। তাই হাতে প্রচুর সময়।’
কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চান?

রণিতা বললেন, ‘আমার প্রথম পছন্দের পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলী। এ ছাড়াও অনেকে আছেন।’

আর বাংলাদেশের কোনো ছবি … ?

মাঝপথে থামিয়ে দিলেন রণিতা, ‘অফকোর্স করতে চাই। এই সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তাঁদের সবার কাছে বার্তা যাক। আমি রিয়েলি হ্যাপি যে, আপনারা আমায় এত ভালোবাসেন। আমি সত্যি-সত্যি-সত্যি … তিন সত্যি করলাম, ভালো ছবিতে অভিনয় করতে চাই।’

ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে। সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে এসে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো ছোট থেকে নাচ শিখেছেন?

উত্তরে রণিতা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি ওড়িশি ও কত্থক ড্যান্স জানি। আমি তো বহু নাচের ফাংশনও করেছি। মাঝে যেটা হয়েছে, সময় পেতাম না। আবার নতুন করে স্টেজ শো শুরু করব।’

সময় প্রায় শেষ। উঠবার আগে ঝটপট করে কয়েকটা প্রশ্ন করার অনুমতি চেয়ে নিলাম। হাসলেন রণিতা।

প্রিয় রঙ?

রণিতা : ডিপ লাল আর কালো। মাঝে মাঝে অফ হোয়াইট।

প্রিয় পোশাক?

রণিতা : ডেনিম জিনস, ফুল শার্ট। তবে সময় অনুযায়ী শাড়ি বা আনারকলি কাটের সালোয়ার।

শপিং করলে কী কেনেন বেশি?

রণিতা : জুতো। এখনই আমার ১৮ জোড়া জুতো আছে।

অবসরে কী করেন?

রণিতা : নাচ প্র্যাকটিস করি বা ঘুমোই।

কী খেতে ভালোবাসেন?

রণিতা : তেল, ঝাল খুব খাই না, হাল্কা রান্না করা খাবার। তবে পিৎজা যেকোনো সময়ে চলতে পারে।

হাতব্যাগে কী থাকা চাই-ই চাই?

রণিতা : টিস্যু পেপার, কাজল, প্ল্যাস্টিক মানি, লিপগ্লস, চিরুনি আর গণেশ ঠাকুরের ছবি।

সবশেষে, রণিতা দাসকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানালাম। প্রত্যুত্তরে বললেন, “থ্যাঙ্কস। খুব মন দিয়ে ‘সুপার কিড’ দেখুন। আর অবশ্যই আমার ভুল ত্রুটিগুলো বলবেন। তাহলে আমি আরো ভালো কাজ করতে পারব।”



মন্তব্য চালু নেই