এ কেমন চিকিৎসা !

মাত্র আড়াই মাসের শিশু মুসরাত জাহান। মলদ্বার ছাড়াই জন্ম নেয় শিশুটি। এ দুই মাসে দু’বার অপারেশন করা হয় তার। শেষ অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারে হিট দেয়ার সময় শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। শিশুটি এখন মৃত্যুশয্যায়। এখন তৃতীয় দফায় অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার জয়নব খাতুন মুন্নী ১৯ মে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুসরাত জাহানকে জন্ম দেন। জন্মের পরে দেখা যায়, শিশুটির মলদ্বার নেই।

গত ২০ মে অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির পেটের সামনের দিকে মলদ্বার প্রতিস্থাপন (কলোস্টমি) করেন ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোজাম্মেল হক। পরে গত ১০ জুলাই মলদ্বারের নাড়িটি পেটের বাইরে বের হয়ে এলে ১১ জুলাই শিশুটিকে ডা. মোজাম্মেলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডা. মোজাম্মেল হক ১১ জুলাই রাতেই শিশুটির পেটে দ্বিতীয় অপারেশন করে নাড়িটি পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। ৩/৪ ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে শিশুটিকে বের করে তার বাবা-মার কাছে দেয়া হয়। তারা দেখেন শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া। পোড়ার কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানান, ওটিতে এসির ঠাণ্ডায় শিশুটির জ্ঞান ফিরছিল না। তাই সামান্য হিট দেয়া হয়েছে। একটু ওষুধ লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে সকালেই অপারেশন করা মলদ্বারের ওই নাড়িটি আবার পেটের বাইরে বের হয়ে আসে। এই অবস্থায় অপারেশনের পরের দিন ১২ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে শিশুটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হলে ঈদের পরে ২০ জুলাই শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শিশু সার্জান ডা. সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরামর্শে ওই দিনই শিশু মুশরাত জাহানকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত শিশুটি রামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিল।

শিশুটির শরীরের পোড়ার ক্ষত দেখে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে সেবিকারা পর্যন্ত হতভম্ব। হাসপাতাল থেকে আগে শিশুটির পোড়ার ক্ষত শুকানোর চিকিৎসা দেয়। পরে গত ৩০ জুলাই শিশুটিকে রামেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শিশু সার্জারি বিভাগ ডা. নওশাদ আলীকে দেখানো হয়। বর্তমানে শিশুটির পোড়ার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। এই পরিস্থিতিতে শিশুর চিকিৎসা নিয়ে তার বাবা-মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোজাম্মেল হকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, দ্বিতীয় অপারেশনের পরে শিশুর জ্ঞান ফিরছিল না। তখন এনেসথেসিয়া চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে হিট দেয়া হয়। এতে কয়েক জায়গা পুড়ে যায়।



মন্তব্য চালু নেই