এ কেমন সন্তান? এভাবে শোধ দিলেন বৃদ্ধা মায়ের ঋণ!

‘মা’ ছোট্ট একটি বর্ণ হলে এর বিশালতার পরিমাপ করা কারো পক্ষেই সম্ভব না। একজন সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয় একজন মাকে, সে আর কেউ-ই জানে না।

এরপর নিজে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে যক্ষের ধনের মত বক্ষে আগলে সন্তানকে বড় করে তোলেন মা। তাই তো গানে গানে বলা হয়েছিল, ‘মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পা পোছ বানাইয়া দিলেও শোধ হবে না’। হ্যাঁ, ঠিক তাই। মায়ের ঋণ শোধ করার মত নয়। অথচ সেই মা-ই যখন গর্ভের সন্তানের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়, অবহেলিত হয়, তখন? সে কষ্ট একজন মায়ের বুক কিভাবে সহ্য করে!

দশমাস দশদিন যে ছেলেকে মা গর্ভে ধারণ করেছেন, সে ছেলে আর ছেলের বউ মিলে যখন একজন বৃদ্ধা মাকে অত্যাচার নির্যাতন করেন, তখন সে মায়ের কষ্ট কতটা হতে পারে? এমনটা ভাবতেও তো গা কাটা দিয়ে উঠে।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে শনিবার। সিলিট নগরীতে তখন মুশলধারায় বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্যেই দিনভর নগরীজুগে হাঁটতে থাকেন এক বৃদ্ধা মা। ছেলে আর ছেলের বউয়ের অত্যাচারের কারণে এদিন তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয় যান।

বৃদ্ধা জানান, ‘ছেলের বউ মারধর করে। ছেলেও ভালো করে কথা বলে না। আজ সকালে ছেলে কাজে যাওয়ার পর বউ আমাকে বাইরে বের করে ঘর তালাবন্ধ করে বাইরে চলে যায়।’

শনিবার বিকেলে ঝড় আর বৃষ্টির মধ্যে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়া এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলেন এই বৃদ্ধা। সন্ধ্যার দিকে দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার গৃহবধূ রুমা আক্তার সুরমা ভিজে জবুথবু অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজের বাসায় নিয় যান।

নিজের নাম বলতে পারেন না বৃদ্ধা। নাম জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘সবাই আমায় মধুর মা বলে ডাকে’। নিজের বয়সও জানেন না। তবে দেখলে নব্বই ঊর্ধ্ব মনে হয়।

রুমা আক্তার জানান, নিজের বাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মনতলা, নয়নপুর গ্রামে বলে জানিয়েছেন এই বৃদ্ধা। মাসখানেক আগে সিলেটে ছেলের বাসায় এসেছিলেন। তবে ছেলের বাসা নগরীর কোথায় তা জানাতে পারেননি বৃদ্ধা।

বৃদ্ধার বরাত দিয়ে রুমা জানান, বৃদ্ধার তিন ছেলে। আব্দুস সালাম, আব্দুল কালাম ও আব্দুল মালেক। এক মেয়ে ছিলো, মারা গেছেন। দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। একজন থাকেন নগরীতে। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মাসখানেক আগে ছোট ছেলে আব্দুল মালেক নিজের বাসায় নিয়ে এসেছিলেন মাকে।

বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, এখানে আসার পর ছেলেও কথা বলে না। বউ মারধর করে। আজকে আমাকে বাইরে রেখে সে ঘরে তালা মেরে চলে গেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় ৫শ’ টাকা দিয়ে জমি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের লালন পালন করেছি। এখন ছেলেমেয়েরা আমায় দেখে না।

হবিগঞ্জে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে এই বৃদ্ধা বলেন, ‘বাড়ি গেলে আমার খাওয়া-পড়ার অভাব হবে না। নিজেদের জমি চার ভাগ করেছি। তিন ভাগ তিন ছেলে আর এক ভাগ আমার রয়েছে। এছাড়া এলাকার মানুষ আমাকে খাতির যত্ম করে।’

রুমা আক্তার সুরমা বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু অবস্থায় থাকলেও বৃদ্ধাকে বাসার ভেতরে যেতে রাজী হচ্ছেন না। সিঁড়িতেই বসে আছেন। হবিগঞ্জে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।



মন্তব্য চালু নেই