এ মাসেই নতুন কাঠামো অনুমোদন

নতুন কাঠামোয় জুলাই মাসের বেতন দিতে হলে এ মাসেই তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদনের জন্য চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। আর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য জুলাই মাসে নতুন বেতন কাঠামো না উঠলে আগস্টে সেই কাঠামোতে বেতন তুলতে পারবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সে ক্ষেত্রে অবশ্য যখন নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন সেইসঙ্গে তাদের বকেয়া বেতনও দেয়া হবে।

ইতিমধ্যে নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছে বেতন কমিশন পর্যালোচনা কমিটি। যেখানে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়া হয়েছে। যদিও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে নতুন যে পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সরকার, তাতে চাকরিজীবীদের কোনো লোকসান হবে না। কারণ প্রতিবছরই মূল বেতনের ৫ শতাংশ করে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। এতে পদোন্নতি না পেলেও ১৫ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে যাবে তাদের বেতন-ভাতা।

তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে নতুন বেতন কাঠামো তৈরির পর থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এমনকি সচিবালয়কেন্দ্রিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলো আন্দোলনের হুমকি দেয়। পরে অবশ্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছুটা আশ্বস্ত হন তারা। আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসেন তারা।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়া সম্পর্কে অবশ্য বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. নিজামুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘সরকার যে যুক্তি দেখিয়ে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ার কথা বলছে, তাতে সিনিয়র কর্মচারীদের কোনো লস হবে না। তবে যারা নতুন চকরিতে ঢুকেছেন এবং ঢুকবেন সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারাই।’

উল্লেখ্য, টাইম স্কেল সম্পর্কে সরকারি বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো চাকরিজীবী পদোন্নতি না পেলে সে ক্ষেত্রে ৮ বছরে একটি, ১২ বছরে একটি এবং ১৫ বছর পর একটি সর্বমোট চাকরি জীবনে তিনটি টাইম স্কেল পাবেন। প্রতিটি টাইম স্কেল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর বেতন স্কেল একধাপ ওপরে উন্নিত হবে। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি না পেলেও আর্থিক সুবিধা পান। বিশেষ করে সরকারি চাকরির ৬৫ শতাংশই ব্লকপোস্ট রয়েছে। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ নেই। তারাই মূলত এই সুবিধা পান।

এদিকে সিলেকশন গ্রেড সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে কিংবা পদ না থাকায় একই কাঠামোয় সন্তোষ্টির সঙ্গে চাকরি করার পরও পদোন্নতি পান না। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে শর্তসাপেক্ষে কিছুসংখ্যক চাকরিজীবীকে উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। একেই বলা হয় সিলেকশন গ্রেড।

সিলেকশন গ্রেড সম্পর্কে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘সরকার এ নিয়ে কি করছে এখনো জানি না। ফাইনাল সিদ্ধান্ত হলেই এ বিষয়ে বলা যাবে।’

এদিকে নতুন বেতন কাঠামোয় সর্বনিম্ন গ্রেডে মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০০ টাকা। বর্তামানে সর্বনিম্ন অর্থাৎ ২০তম গ্রেডে মূল বেতন ৪১০০ টাকা। এতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।

সর্বশেষ বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ১৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রেখে মোট ৪৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন বেতন কাঠামো যখনই দেয়া হোক তা কর্যকর হবে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে।’

একটি সূত্র জানায়, নতুন বেতন কাঠামোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হবে এটা ঠিক নয়। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের কিছু সুপারিশ কাট-ছাট করা হয়েছে। এছাড়া এর আগে দেয়া ২০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা ও ইনক্রিমেন্টও সমন্বয় করা হবে।

জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে নতুন বেতন কাঠামোর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। পরে বেতন কাঠামো নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তা চূড়ান্ত করেন। সেটেই ঈদের আগে আগামী সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই