ওজন কমাতে পুষ্টি সংক্রান্ত যে ভুলগুলো অনেকেই করেন

স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় একটা কথা আছে যে “আমরা তাই যা আমরা খাই” অর্থাৎ আমরা যা খাই তারই প্রতিফলন আমাদের দেহে পড়ে। তাই আমাদের জীবনে পুষ্টির গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করতে পারি না। খাবারের প্রতি আমাদের আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের দেহ কিভাবে কাজ করছে এবং আমরা ঠিক কত বছর এই পৃথিবীতে টিকে থাকবো সেগুলো আংশিকভাবে আমরা যা খাই তার উপরই নির্ভর করে। আর এটাই হচ্ছে পুষ্টির গুরুত্ব।

এজন্যই ওজন কমাতে অনেকে প্রথমেই কি খাওয়া হচ্ছে তার উপর বেশি নজর দেয়। এটা নিঃসন্দেহে ভালো একটি কাজ। কিন্তু পুষ্টি সম্পর্কিত সাধারণ ভুলগুলো যদি ভালো ভাবে না জানা থাকে তাহলে হয়তো দেখা যাবে অস্বাস্থ্যকরভাবে খাবার গ্রহন করা বন্ধ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা হচ্ছে অথবা ওজন কমানোর লক্ষ্য সঠিক ভাবে পূরণ হচ্ছে না। এছাড়া পুষ্টি সম্পর্কিত এমন কিছু ভুল আছে যেগুলো ওজন না কমিয়ে বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় অনেকেই ওজন কমাতে ফলের জুসের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু উচ্চ মাত্রার চিনিযুক্ত ফলের জুস যদি বাদ দেয়া না যায় তাহলে এটি হবে পুষ্টি সম্পর্কীয় একটি ভুল যা ওজন কমানোর লক্ষ্যকে নষ্ট করে দেবে।

চলুন তাহলে জেনে নেই পুষ্টি সম্পর্কিত কিছু ভুল সম্পর্কে-

ক্যালরির দিকে অত্যাধিক নজর দেয়া

খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে ক্যালরির পরিমাণ দেখে খাওয়া খুবই ভালো একটি অভ্যাস কিন্তু যখন এই দেখার পরিমাণটা অত্যাধিক হয়ে যায় সমস্যাটা হয়ে যায় তখন। এর ফলে হয়তো ইটিং ডিসঅর্ডারেও আক্রান্ত হতে পারেন। আবার দিন শেষে দেখা যেতে পারে ঠিক যতটুকু পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার খাওয়া উচিত ততটুকু পরিমাণ খাওয়া হয়নি। যার কারনে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে হয়তো দেহের কাজ ভাল ভাবে সম্পন্ন হবে না।

প্রকৃত খাবারকে উপেক্ষা করা

সব সময় প্রাকৃতিক খাবারের উপর অগ্রাধিকার বেশি দেয়া উচিত। যদি তা না দিয়ে ওজন কমানোর বিভিন্ন ঔষধের উপর নির্ভর করা হয় তাহলে হয়তো বেশ বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এর ফলে হয়তো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ফলের জুস

ওজন কমাতে গেলে ফলের জুস খুবই উপকারি। কিন্তু সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিনি দেয়া ফলের জুস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারন চিনিযুক্ত ফলের জুস ওজন না কমিয়ে বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবর্তে আঁশযুক্ত সবজির জুস ইচ্ছে মতো খেতে পারেন কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। এবং ফলের জুস খেলে অবশ্যই তা চিনি ছাড়া খেতে হবে।

না খেয়ে থাকা

ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে পূরণের জন্য না খেয়ে থাকা হচ্ছে একটি ভুল প্রক্রিয়া। কারন না খেয়ে থাকার ফলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব হয় এবং তখন দেহের প্রচুর ক্ষতি হয়। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি হয়।

এক বেলার খাবার বাদ দেয়া

ওজন কমানোর লক্ষ্যে যদি ক্যালরির পরিমাণ কমানোর জন্য কোনো এক বেলার খাবার বাদ দেয়ার অভ্যাস করা হয় তাহলে তা লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে না বরং বিপরীত ফল পাবেন। কারন না খেয়ে থাকার পর যে খাবারটি খাবেন তখন বাদ দেয়া খাবারের চেয়ে বেশি খাওয়া হবে। যা ওজন কমানোর লক্ষ্যকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

অনুপযোগী ডায়েট অনুসরণ

স্বল্প সময়ের আকর্ষণীয় ফেড ডায়েট প্ল্যান এর পেছনে দৌড়ান অনেকেই। যা হয়তো নাটকীয় ভাবে সাময়িক ওজন কমালেও দীর্ঘ মেয়াদি কোনো ফল দেয় না। এই ডায়েট গুলো কোনভাবেই স্বাস্থ্যকর নয় এবং কিছু ডায়েট স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপদজনকও হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেয়া

ওজন বেড়ে যাওয়ার চিন্তা করে বা জিরো ফিগার অর্জনের লক্ষ্যে অনেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার গুলোও খাওয়া বাদ দিয়ে দেয়। যার ফল হচ্ছে নিজের কবর নিজেই খনন করা। কারন গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান দিনের পর দিনের বাদ দেয়ার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব ঘটে এবং শরীরের কার্যাবলী সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় না সেই সাথে স্বাস্থ্যকর ভাবে বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে দাড়ায়।

লেখিকা

শওকত আরা সাঈদা(লোপা)

জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ

এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্‌থ

খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান(স্নাতকোত্তর)(এমপিএইচ)

মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া



মন্তব্য চালু নেই