ওমানে যৌন নির্যাতনের শিকার এক গৃহপরিচারিকার করুণ কাহিনী জানুন…

‘ভোর সাড়ে চারটায় আমাকে কাজে নেমে পড়তে হয়। কাজ শেষ হতে হতে রাত একটা পেরিয়ে যায়। সারাটা দিনে তারা আমাকে বসতে পর্যন্ত দেয় না। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমাকে খেতে দেয় না। ছুটি চাইলে বলে, ‘‘আমি তোমাকে ১ হাজার ৫৬০ রিয়াল দিয়ে (প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা) কিনেছি, আমাকে তা ফেরত দিলেই তুমি যেতে পারবে।” কথাগুলো বলছিলেন ওমানের আটকে পড়া বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা আসমা।
‘ওমান: গৃহপরিচারিকা পাচার ও বন্দী’ শিরোনামে গতকাল বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ওই প্রতিবেদনেই তুলে ধরা হয় বাংলাদেশি আসমার কাহিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমানে গৃহপরিচারিকাদের ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন, পাসপোর্ট জব্দ রাখা, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, পর্যাপ্ত থাকা-খাওয়ার সুযোগ না দেওয়া, পূর্ণ বেতন না দেওয়া এবং অন্তত একজন গৃহপরিচারিকার এক মনিবের কাছ থেকে অন্য মনিবের কাছে ‘বিক্রি’ হওয়ার সত্যি ঘটনা সম্বন্ধে জেনেছে এইচআরডব্লিউ।
অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রের মতো ওমানের অনেক পরিবার ঘরদোর পরিষ্কার, রান্না করা ও তাদের শিশুর যত্ন–আত্তির জন্য অভিবাসী গৃহপরিচারিকার ওপর নির্ভর করে থাকে। ভালো বেতন ও সুন্দর পরিবেশে কাজের আশায় সেখানে যান মূলত বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়ার নারীরা। কিন্তু অনেকেরই আশাভঙ্গ হয়। ধারণা করা হয়, অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার গৃহপরিচারিকা ওমানে কাজ করছেন।
বাংলাদেশি আসমা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক মনিবের বাসায় কাজের উদ্দেশ্যে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে অর্থের বিনিময়ে কিনে নেন ওমানের মনিব।

বিদেশি গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ব্যাপকতা সামাল দিতে ওমান কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় দেশটিকে অভিযুক্ত করেছে এইচআরডব্লিউ। সেখানে গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ব্যাপকতা বোঝাতে সংস্থাটি বলেছে, এটিকে কখনো কখনো দাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করা চলে। ২০১৫ সালের মে মাসে ওমানে কাজ করা ৫৯ জন গৃহপরিচারিকার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ওমানের আইনে গৃহপরিচারিকাদের পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষা দেওয়া হয় না।



মন্তব্য চালু নেই