ওয়ানডে বলেই প্রেরণা বাংলাদেশের

ক্রিকেটের নিখাঁদ চৌহদ্দিতে আগেই জয়-পরাজয় বলে দেওয়া যায় না। হয়ত পরিসংখ্যানের নিক্তি-পাল্লায় যোগ-বিয়োগ করে একটা বুঝ পাওয়া যায়। বুঝটা হলো— দুই দলের পূর্বাপর অবস্থা এবং সার্বিক শক্তি বিচারে অবস্থান। এই ক্রিকেটীয় বিচারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে সফরকারীদের চাইতে। টোয়েন্টি২০ সিরিজেও তা প্রমাণ হয়েছে। তবে ভার্সান চেঞ্জ বলেই সম্ভাবনার আলো জ্বলছে; জ্বলছে পেছনের ইতিবৃত্তান্ত; তথ্য-উপাত্ত। ওয়ানডেতে দেশের মাটিতে সর্বশেষ ১১ ম্যাচের ১০টিতেই জয়ী বাংলাদেশ। শুক্রবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজ। বিকাল ৩টায় ম্যাচ শুরু। বৃষ্টির চোখ রাঙানি থাকলেও ওয়ানডে বলেই এই ম্যাচে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ।

আগের মোকাবেলায় ১৪ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের জয় একটি; বাকিগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার। ভাইসব, জয়-পরাজয়ের হিসেবে তুলে রেখে দিন। বাংলাদেশের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিন্তু বদলে গিয়েছে। ওয়ানডে বলেই বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা মাঠেও নির্মম পেশাদারি চনমনে দেখা গিয়েছে ক্রিকেটারদের। যেন একদণ্ডও সময় নষ্ট করার ছিল না। একটি বিষয় অবশ্য বলাবলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে-তবে কি এবি ডি ভিলিয়ার্সের চলে যাওয়ায় আবার প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বাংলাদেশে! মেঘ-বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকছে শুক্রবারও।

ক্রিকেট ভরা বর্ষার কাছে একটুও প্রিয় নয়; এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বুধবার রাত থেকে বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টিতে ঢাকাবাসীর জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে সয়লাব হয়েছে রাজধানী ঢাকা। সকাল থেকে রাত অব্দি ধারাবাহিক বৃষ্টিতে নাকাল জনপদ। তার রেশ পড়েছিল মিরপুরেও। ক্রিকেটারদের সেশন-টু সেশন অনুশীলন বেজায় ব্যাহত হয়েছে। পুরো স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা টিপল দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ম্যাচেও থাকছে বৃষ্টির সম্ভাবনা, ৮০ ভাগ। নেই রিজার্ভ ডে। ফলে প্রথম ম্যাচ আবাহাওয়াবিদদের বার্তা অনুযায়ী পণ্ড হয়ে গেলে ক্রিকেটপ্রেমীরাই কষ্টে পুড়বেন। তবে বেশ কটা দিন গরমে হাঁসফাঁস করছিল গোটা শহর। স্বমহিমায় ফেরা বর্ষা কিন্তু স্বস্তি এনে দিয়েছে নগরবাসীর।

ক্রিকেটের চিরশত্রু বৃষ্টির কথা তুলে রাখুন। এবার ভাবুন প্রতিপক্ষ দল নিয়ে। বলতে দ্বিধা নেই, টিম হিসেবে তারা অনেক বেশি সুসংগঠিত-উন্নত ও প্রাচুর্যসম্পন্ন। তার চেয়েও বড় কথা তারা তৈরি হয়ে এসেছে। জেনে এসেছে, কিভাবে স্বাগতিক টিমটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত-পাকিস্তানকে। বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার বোকামো তারা করছে না। তার প্রমাণ মিলেছে টোয়েন্টি২০ সিরিজে। বাংলাদেশ এক ফুৎকায় উড়ে গিয়েছে। এবার কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের প্রমাণের পালা।

টোয়েন্টি২০ এবং টেস্টের বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডের টিম বাংলাদেশের বিস্তর ফারাক। মনে হতে পারে, অচেনা এক দল। দলের আগা-গোড়া সবাই যেন মজবুত। বিশ্বকাপ মাতানো সেরা ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ অনেক দিন পর ফিরছেন; প্রত্যাবর্তন ঘটছে এনামুল হকেরও। যদিও তার খেলা নিয়ে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্যাটিং-বোলিংয়ে একটুও ঘাটতি নেই বাংলাদেশের। পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ ওয়ানডেতে একটি সমীহ জাগানিয়া দল। জয়-পরাজয়ের দিকে পাখির চোখ থাকলেও কৌশলী মাশরাফি বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট ভালভাবে সিরিজটা শেষ করা। শেষ দুইটা সিরিজের (পাকিস্তান ও ভারত) রিপিট করতে পারলে ভাল কিছুই হবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের সব ডিপার্টমেন্টে একধাপ এগিয়ে থেকে পারফর্ম করতে হবে।’

উইকট নিয়ে ওয়ানডে সিরিজেও ধন্ধে রয়েছে টিম বাংলাদেশ। নিজ দেশে মনমতো উইকেট বানিয়ে সুবিধা আদায় করার কৌশলও এখন রপ্ত করা শেষ বাংলাদেশের। তার প্রমাণ, একটু বাউন্সি উইকেট বানিয়ে ভারতকে ফাঁদে ফেলা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্পিন ত্বত্তের ফন্দি-ফিকির যেন কোনো কাজে লাগেনি। বরং উল্টো বুমেরাং হয়েছে। নিজেদের চিরচেনা উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টোয়েন্টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ খাবি খেয়েছে। তাই স্লো-স্পিনিং উইকেট নাকি একটু গতিময় উইকেট-এই দোটানায় পড়েছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটবোদ্ধারা মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটু স্লো-লো এবং বাউন্সি উইকেটই ভাল হবে।

এবিডির না থাকাটা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একটা বড় ধাক্কা। কিন্তু বাকি যারা আছেন, তারা আবার প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিতে যথেষ্ট। অধিনায়কের নাম হাশিম আমলা। তিনি একবার দাঁড়িয়ে গেলেই সারা। প্লেসিস, কক, মিলার, নবীস রুশো কি করতে পারেন তা আর অজানা নেই। সঙ্গে বোলিংয়েও স্পিনে একটা ইমরান তাহিরের সঙ্গে গোটা তিন বারুদে গোল্লা বোলার তো থাকছেনই। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং অ্যাটাক আমলে নিয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘ওদের পেসারদের সঙ্গে স্পিন অ্যাটাকও শক্তিশালী। ইমরান তাহিরের মতো লেগস্পিনার আছে ওদের। সঙ্গে মরকেলরা। ওদের বোলিংকে মোকাবেলা করতে হলে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে।’

এই সিরিজের ম্যাচগুলো শুরু থেকেই রেকর্ড বুকে ঠাঁই পাচ্ছে। টোয়েন্টি২০ সিরিজের পর ওয়ানডেতেও আইসসির নতুন নিয়ম এই ম্যাচ থেকে চালু হচ্ছে। ৩০ গজের বাইরে বেশি ক্রিকেটার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ব্যাটসম্যান এবং বোলারদের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য। থাকছে ফ্রি হিটের নতুন রীতিও।

দক্ষিণ আফ্রিকা ধারে-ভারে যতই এগিয়ে থাক, শের-ই-বাংলা ক্রিকেটপ্রাণ দর্শকরা কিন্তু বাংলাদেশের দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে বেজায় আতঙ্ক ছড়াবে। তাদের উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ভেসে যেতে পারেন আমলারা। কখনো ব্যাটে; কখনো বল হাতে। কারণ, ক্রিকেটের সঙ্গে গ্যালারির আবেগ মিশলে অনেক কিছু সম্ভব হয়। অনেক অপ্রত্যাশিতকেও তখন সত্যাসত্যি বাস্তব করে নেওয়া যেতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই