ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ২ দিনে গোসল একবার!

গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীজুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর পানি সরবরাহকারী সংস্থা ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহে হিমশিম পাচ্ছে। যেটুকু দিচ্ছে তাতেও দুর্গন্ধ-ময়লা। এ কারণে অনেকেই দুই-তিন দিন পর গোসল করছেন। এ ছাড়া বাড়ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ।

তবে ওয়াসা বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, নগরবাসীর দাবি সঠিক নয়। ওয়াসার লাইন ফুটো করে চোরায় পথে পানি নেয়ায় কোথাও কোথাও লাইনে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়। তা দিয়ে ময়লা-আবর্জনা গিয়ে এমন সমস্যা দেখা দেয়। অভিযোগ করলে তারা ঠিক করে দেন।

রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, রামপুরা, নাখালপাড়া, ধানমণ্ডি, মানিকনগর, গোপীবাগ, টিকাটুলী, অভয় দাস লেন, কে এম দাস লেন, স্বামীবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, শশী মোহন বসাক লেন, বনগ্রাম, মৈশুন্ডি, খিলগাঁও, বাসাবো, তিলপাপাড়া, গোড়ান, মেরাদিয়া, সিপাহীবাগ এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা দেখা গেছে। বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা খাওয়া-দাওয়া, অজু-গোসলসহ প্রাত্যহিক কাজে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহারের পরেও পানিকে ব্যবহার উপযোগী করা যাচ্ছে না।

মালিবাগের বাড়ি মালিক হাসান মিয়া বলেছেন, ‘দিনের বেলায় মোটামুটি যেটুকু পানি পাওয়া যায় রাত হলেই তাতে গন্ধ-ময়লা আবর্জনা বেড়ে যায়। ভাড়াটিয়ারা শুধু অভিযোগ করে। পানি সমস্যার কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায়। অজু-গোসল করা যায় না। অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয় না।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোবারক মিয়া বলেন, ‘পানি সমস্যা এক দিনের না। বছর প্রায় সময়ই আমরা এ সমস্যায় ভুগি। এখন ড্রেনের পানিতে যেমন গন্ধ লাইনের পানিতেও ঠিক একই গন্ধ। পানির লাইন থেকে স্যুয়ারেজের ময়লা আসে। তাই লাইনের পানি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। জারের পানি কিনে খাই। গোসল করি দুই দিনে একবার।’

ওয়াসা সূত্র জানায়, পানি সংকটের অন্যতম কারণ লাইনের সংস্কার ও অধুনিকায়নের কাজ। এর জন্য চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এতে অনেক এলাকায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় পানির সংকট বেড়ে গেছে। এ ছাড়া চোরাইপথে ওয়াসার পাইপ ফুটো করে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পানির লাইন সংযুক্ত করায় সে স্থানে ভালো করে জোড়া লাগানো হয়। ফুটো করা স্থান দিয়ে ময়লা-আবর্জনা লাইনে গিয়ে পানি নষ্ট হয়। যে কারণে পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা দেখা দেয়।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ফুটিয়েও ওয়াসার পানি দুর্গন্ধমুক্ত করা যায় না। ময়লা থাকায় তা আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়েই বিভিন্ন কোম্পানির পানির দ্বারস্থ হতে হয়।

পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াসার শতকরা ২২ শতাংশ পানি ঢাকা আশপাশের নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম মৌসুমে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এতই দূষিত থাকে, তা সঠিকভাবে বিশুদ্ধ করা হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে অনেক সময় ওয়াসা অতিমাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। যে কারণে পানিতে গন্ধ পাওয়া যায়।

ওয়াসা বলছে, সংস্কারকাজ শেষ হলে রাজধানীবাসী দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবে। বর্তমানে তাদের পানি ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ২২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ২৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে।

গত ৫ মার্চ মুগদা বাজার ওয়াসা গলিতে ‘জনপ্রতিনিধি-জনতার মুখোমুখি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনও অভিযোগ করেন, ওয়াসার পানির কারণে নগরবাসীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।

তবে মেয়রের এ বক্তব্য প্রত্যাখান করে ওয়াসার জনসংযোগ দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে পানি উৎপাদন এবং সরবরাহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে ওয়াসা। ওয়াসা কখনোই ময়লা বা দূষিত পানি সরবরাহ করে না। যে ২২ ভাগ নদীর পানি সরবরাহ করা হয় তা পরিশোধিত এবং দূষণমুক্ত করেই সরবরাহ করা হয়।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন মাটির বেশ নিচে স্থাপিত এবং তা পানির লাইনের সাথে মিশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে সরবরাহকৃত পানি গ্রাহকের অসচেতনতার কারণে দূষিত হতে পারে।

বিশুদ্ধ পানি সংকটের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা বিশুদ্ধ করেই নগরবাসীর কাছে পানি পৌঁছায়। প্রতিদিন ওয়াসার লাইন কেটে চোরাইপথে সংযোগ নেয় অনেকেই। প্রধান লাইন ফুটো করার কারণে পানিতে ময়লা প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে আমরা লাইনের পানিকে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে পান করতে অনুরোধ করছি।



মন্তব্য চালু নেই