ঔষধ ছাড়াই কাটিয়ে উঠুন অনিদ্রার সমস্যা

ঘুমের সমস্যা? আপনি একা নন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন কম নিদ্রাজণিত সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা হতে পারে বয়ঃসন্ধিকালে, হতে পারে বড়দের আবার বৃদ্ধদেরও। এমনকি বয়সের সাথে সাথে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই আগে থেকেই ঘুমের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলে নিজেদের এধরণের সমস্যা থেকে দূরে রাখা সম্ভব।

ইনসোমনিয়া কি?
অনেকেই মনে করেন “ইনসোমনিয়া” মানেই হল ঘুমের ঘাটতি। প্রকৃতপক্ষে এটি দ্বারা ঘুম সংক্রান্ত যাবতীয় সকল সমস্যাকে বোঝায়। যেমন-
১। সহজে ঘুম না আসা।
২। রাতে ঘুমের মধ্যে হাটা
৩। খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া
৪। নির্বিঘ্ন ঘুম না হওয়া

ইনসোমনিয়ার কুফল-
১। ঘুমের সমস্যা মেদ বাড়ায়, স্থূলতা তৈরি করে,
২। দিনের বেলা ঝিমুনি আসে
৩। মেজাজ খিটখিটে থাকে।
৪। দূর্বলতা তৈরি করে
৫। রক্তের চাপ ওঠানামা করে
৬। ডায়বেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
৭। ক্রোরোনিক ব্যাথা অনুভব হয়
৮। মনোযোগ নষ্ট করে, কাজের আগ্রহ হ্রাস করে
৯। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে
১০। দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে।

ঔষধ সেবন না করে কীভাবে ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পাবেন?
অনেক সমস্যার জন্য ঔষধ খাওয়া স্বাভাবিক সমাধান হলেও এক্ষেত্রে নয়। ঔষধ বরং ঘুমের রুটিন বদলে দিতে পারে। ঝিমুনি তৈরি করতে পারে। ঔষধের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে সেটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং পরবর্তিতে ঘুম না হওয়াই অভ্যাস হয়ে যেতে পারে।

কী করবেন তাহলে? দুইটি উপায়ে ঔষধ ছাড়াও ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে ঊঠতে পারবেন।

১। হাইজিন ঘুম
২। ইনসোমনিয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত জ্ঞানীয় আচরণগত চিকিৎসা যাকে CBT-I বলা হয়।

হাইজিন ঘুম কি?
হাইজিন ঘুম বলতে বোঝায় এমন কিছু অভ্যাস যা আপনার ঘুমের জন্য সহায়ক। আপনি নিজেই এই অভ্যাসগুলো তৈরি করতে পারেন। জেনে নিন ৭ টি অভ্যাস যা ভাল ঘুম হয় এমন মানুষেরা করেন এবং করেন না।

করতে হবে-

১। একটা নির্দিষ্ট ঘুমের সময় রোজ ঘুমাতে যেতে হবে।
২। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। তবে কঠিন কোন ব্যায়াম করবেন না। সহজ যোগ ব্যায়াম করতে পারেন।
৩। প্রাকৃতিক আলোয় থাকার চেষ্টা করুন। বাইরে যান। অন্তত সকালে কিছুক্ষণ খোলা পরিবেশে থাকুন।
৪। বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট করুন।
৫। ঘুমানোর আগে গোসল করুন।
৬। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, পেশী শিথিল করার ব্যায়াম করুন ঘুমানোর আগে।
৭। ঘুমানোর পরিবেশ যেমন আপনার বিছানাটি যেন আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কক্ষের তাপমাত্রা যেন ঠিক থাকে। আলো যান শীতল হয়।

করা যাবে না-
১। ক্যাফেইন জাতীয় কিছু খাবেন না দুপুরের পর। সেটা চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক, সোডা যাই হোক।
২। রাতের খাবারের সাথে ওয়াইন খাবেন না। এর এলকোহল ঘুম নষ্ট করে।
৩। চকোলেট, নিকোটিন, কিছু ঔষধ যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় তা খাবেন না।
৪। ঘুমানোর আগে খুব ভারী খাবার খাবেন না।
৫। টিভি দেখা, মোবাইলে বা কম্পিউটারে বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
৬। দিনের বেলা ঘুমাবেন না। এতে রাতে অনেক সময় আর ঘুম আসে না।
৭। মনকে প্রশান্ত করার চেষ্টা করুন। দুশ্চিন্তা করবেন না।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এত নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা কঠিন। তবু যদি আপনি এটা করতে পারেন তাহলে অনিদ্রা কাটানো সম্ভব। কিন্তু এতসব করার পরও যদি আপনার ঘুমের সমস্যা না কাটে তাহলে Cognitive Behavioral Therapy for Insomnia, or CBT-I একমাত্র সমাধান। সেক্ষেত্রে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করুন।



মন্তব্য চালু নেই