কক্সবাজার রাডার ষ্টেশন চরম ঝুঁকিতে, ধ্বসে পড়ার শঙ্কা

জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় এক’শ বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার শহরের অত্যাধুনিক ডপলার রাডার ষ্টেশনটি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাহাড়ের চূঁড়ায় হওয়ায় পাহাড় ধ্বসের যে কোন মুহুর্তে প্রণহানি সহ বড় ধরনের দূর্ঘটনার ঘটনায় আংশকাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না স্থানীয় জনগণ।

২৭ জুলাই দিবাগত রাতে রাডার ষ্টেশনটির পশ্চিম পাশের একাংশ পাহাড়ের পাদদেশের বসতবাড়ীতে ধসে পড়ে নারী-শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। ধসে পড়া মাটি ও স্থাপনার অংশ বিশেষ এখনো চাপা পড়ে আছে বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্থ বসতির উপর।

আবারো পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে রাডার ষ্টেশন কর্তৃপক্ষ নামে মাত্র পলিথিন দিয়ে ধসে যাওয়া অংশ ঢেকে রেখেছে। এতে করে একদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে রাডার ষ্টেশনের মূল স্থাপনা, অপরদিকে ফের পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাডার ষ্টেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা ও নি¤œমানের গাইড ওয়াল নির্মাণের কারণেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার এক মাস আগে ফাটল ধরলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। বরং ফাটল ধরা স্থানে নালা করে দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এতে করে পাহাড় ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটে। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় ফের ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কক্সবাজার রাডার ষ্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত এই রাডার স্টেশনটি হতে বাংলাদেশের আবহাওয়ার অবস্থান, পূর্বাভাস দেয়ার পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক আবহাওয়া বার্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

কিন্তু পাহাড় ধসের শঙ্কায় রাডার ষ্টেশনের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের ঢালুতে নির্মাণ করা হয় তিন স্তরের গাইড ওয়াল। গাইড ওয়াল দিয়ে রাডার ষ্টেশন রক্ষার চেষ্টা এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাডার ষ্টেশন কর্তৃপক্ষ পাহাড় ধ্বসের ঝূঁকি থেকে রাডারটি রক্ষা করতে পশ্চিম পার্শ্বের পাহাড়ের ঢালুতে পাইলিং দিয়ে তিন স্তরের গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়। গত ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে নির্মাণের জন্য কাজটি গণপূর্ত বিভাগকে হস্তান্তর করে রাডার কর্তৃপক্ষ। পরে গণপূর্ত বিভাগ গাইডওয়াল নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে।

এতে কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত কাজটি পায় চট্টগ্রামের টিকাদারী প্রতিষ্টান ইউনুচ এন্ড ব্রাদার্স। পরে ইউনুচ এন্ড ব্রাদার্স নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্টান থেকে কাজটি কিনে নেন কক্সবাজার জালাল আহমদ নামের একজন ঠিকাদার। পরে জালাল আহমদ রাডার ষ্টেশনের ওই তিন স্তরের গাইড ওয়াল গুলো মাইক্রোপাইলিং ও গর্ত করে নামমাত্র নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তড়িগড়ি করে কাজ সমাপ্ত করা হয়। এখানে নিয়মনীতির উর্ধ্বে গিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি পিলারগুলো যত গভীরে যাওয়া দরকার ততটুকু না গিয়ে নামে মাত্র গর্ত করে পিলার দিয়ে এর উপর মাটি চাপা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ভিন্ন স্থান থেকে উল্টো মাটি এনে তাতে চাপা দেয়া হয়।

এতে করে একদিকে অতিরিক্ত মাটি দেয়ায় গাইড ওয়াল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অপরিকল্পিত পাইলিং এর কারণে বর্তমানে পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়। এতে পাহাড়ের ঢালু অংশটি দূর্বল হয়ে যায়। যার কারণে পাহাড়টি ধ্বসে পড়ে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাডার ষ্টেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারনেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাইলিং করার সময় পুরো পাহাড়ে ফাটল ধরেছিল। আর ওই ফাটলে ভারী বর্ষণে পানি ঢুকে পাহাড়টি ধসে পড়ে।

গণপূর্ত বিভাগের একজন কর্মচারী জানান, জালাল আহমদ একটি সিন্ডিকেট করে গণপূর্তের বেশিরভাগ কাজ হাতিয়ে নেন। পরে এসব কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় প্রায় সময়ই জালাল আহমদের কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠে। আর রাডার ষ্টেশনের কাজটিতেও একই ভাবে কারচুপি করেছেন জালাল আহমদ।

কক্সবাজার গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাডার স্টেশনের পাহাড় গুলো রক্ষার জন্য নির্মিত গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পান উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেয়ামত এলাহী।

তিনি আরও জানান, তিন স্তরের গাইডওয়াল রাডার স্টেশনের পাহাড়টি রক্ষা করার জন্য নির্মাণ করা হয়। ওই গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য রাডার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নকশা দেয়া হয়। সেই অনুসারে তিন স্তরের গাইডওয়াল মাইক্রোপাইলিং করে নির্মাণ করা হয়। এতে কোন ধরণের ক্রটি হয়নি বলে দাবী করেন তিনি।

তবে অভিযোগ উঠেছে গাইডওয়াল নির্মাণ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জালাল আহমদ মোটা অংকের বিনিময়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেয়ামত এলাহীকে ম্যানেজ করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেন।



মন্তব্য চালু নেই