কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে আর্টিজান, ঢুকতে মানা

ঘড়িতে তখন দুপুর দেড়টা। গন্তব্য গুলশান-২ এর হলি আর্টিজান বেকারি। ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকভিউয়ের কালো ফটক দেখা যাচ্ছে। তার আগেই পুলিশের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে থামতে হলো। পাশেই একটি তল্লাশি চৌকিতে থাকা তিন পুলিশ সদস্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, ‘কোথায় যাবেন?’

‘হলি আর্টিজান বেকারিতে।’

‘কেন?’

‘এর সর্বশেষ অবস্থা দেখার জন্য।’

‘না ভাই, এখানে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই।’

১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে এর বেশি আর জানাতে পারলেন না ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ।

এ ছাড়া জানা গেল, ওই তল্লাশি চৌকিতে তিন শিফটে ৯ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। হলি আর্টিজানে কারো প্রবেশ ঠেকানোই তাদের কাজ।

গুলশান হামলার আড়াই মাস পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাবলয়েই আছে হলি আর্টিজান বেকারির আক্রান্ত সেই ভবন। নিরাপত্তা প্রশাসন ছাড়া আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারেনি। অন্যদিকে অনুমোদন ছাড়াই বেকারির কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে আর্টিজানের মালিকের বিরুদ্ধে মাস দুয়েক আগে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। কার্যত এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

হলি আর্টিজান বেকারিতে ১ জুলাই রাতে একদল জঙ্গি ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

ঘটনার পরপরই সেখানে গিয়ে নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর সকালে অভিযান শেষে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয় জঙ্গির লাশ পাওয়ার কথাও জানায় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে অনেকটাই বিধ্বস্ত হলি আর্টিজান বেকারির সেই ভবন এখনও বন্ধ রয়েছে।

জন সমাগম কম…

গুলশান হামলার দিন থেকেই ৭৯ নম্বর সড়কসহ আশপাশের কিছু সড়ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলে। কিছুদিন আর্টিজানের আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দারা চলাচল পর্যন্ত করতে পারেনি। এখন অবশ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা সেই তুলনায় কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

তারপরও সেই সড়কে লোক সমাগম কম দেখা গেছে। কেউ আর্টিজানের ভবনে যেতে চাইলে, পুলিশ তাদের ঢুকতে দেয় না। এ বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির গুলশানের বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আক্রান্ত ভবনটির বিষয়ে আদালতের নির্দেশনামতো আমরা কাজ করছি।’

আর্টিজানের ভবনে নিরাপত্তাপ্রহরা কতোদিন থাকবে- জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখা) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

আর্টিজানে কবে যাবে রাজউক?

আবাসিক এলাকায় অনুমতি না দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগে আর্টিজানের ভবনটি অবৈধ চিহ্নিত করে ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এখন তারাই আবার ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে।

গুলশান হামলার ২৬ দিন পরে গুলশানে অবৈধ কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা আসে। ৫৫২টি প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ রেস্তোরাঁ।

হলি আর্টিজান বেকারির ভবন ভাঙ্গা হয়নি কেন- জানতে চাইলে রাজউকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি এক মাসের প্রশিক্ষণে এখানে এসেছি। এ বিষয়ে আপনি গুলশান জোনের অথরাইজ অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন।’

যোগাযোগ করা হলে রাজউকের গুলশান জোনের অথরাইজড অফিসার মো. আদিলুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। তালিকা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। গুলশান-১ থেকে শুরু করে উত্তর দিকে যাচ্ছি। হলি আর্টিজানের ভবনের বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে।’

নার্সিং হোমের বদলে বেকারি

গত ১৭ জুলাই সচিবালয়ে আবাসিক প্লটে ও ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে ও উচ্ছেদ অভিযানের অগ্রগতি নিয়ে এক বৈঠকে গণপূর্তমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই জায়গায় নার্সিং হোম করার জন্য ১৯৭৯ সালে মালিককে বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৮২ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। রেস্তোরাঁ বা বেকারি করার কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।

নার্সিং হোমের নামে বরাদ্দ করা এই প্লটের একটি অংশে হলি আর্টিজান বেকারি গড়ে তোলা হয়েছে।

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ১০ কাঠা জমির উপর দোতলা ভবনে গড়ে ওঠা হলি আর্টিজান বেকারি ভিনদেশিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। লেকের ধারের এই ক্যাফেতে খোলা লনও ছিলো।

মিলছে হলি আর্টিজানের খাবার

সীমিত আকারে আবারও হলি আর্টিজান বেকারির খাবার বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। তবে পুরনো ঠিকানায় নয়, গুলশানের একটি জাপানিজ সুসি রেস্তোরাঁ ইজুমিতে মিলছে আর্টিজানের খাবার। গত ১২ জুলাই থেকে শুধু মোবাইল ফোনে গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া ফরমায়েশের খাবারগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। তবে নিরাপত্তার কারণে ইজুমির ভিতরে গিয়ে এই বেকারির খাবার ক্রয় বা খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি হলি আর্টিজানের খাবার কিনতে আসা গ্রাহকদের গাড়িও নিরাপত্তার কথা ভেবে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টে সূত্রে জানা যায়, গুলশান হামলায় আর্টিজানের মূল ওভেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তারা এখন হাতেগোনা কয়েকটি খাবারের তৈরি করছেন। দ্রুতই পুরো আঙ্গিকে কার্যক্রম শুরুর আশায় আছে আর্টিজান কর্তৃপক্ষ।



মন্তব্য চালু নেই