কনে চুরি করে বিয়ে হয় যেখানে

কিরগিজস্তানের একটি নিষ্ঠুর ঐতিহ্য হল বিয়ের আগে বউ অপহরণ করা। সেখানে একজন অবিবাহিত নারীকে যার বিয়ে করার ইচ্ছা করা হয়, তাকে কিডন্যাপ বা অপহরণ করা হয়। তারপর তার উপর চলে নিষ্ঠুর নির্যাতন, যে পর্যন্ত না সে বিয়ের জন্য রাজি হন। সাম্প্রতিক একটি স্থানীয় এনজিও এর গবেষণার পর জানা যায়, কিরগিজস্তানের পঞ্চাশ শতাংশ বিবাহ এভাবেই সম্পন্ন করা হয়।মেয়েদের তুলে নিয়ে যেয়ে তাকে তারা প্রচুর মানসিক চাপে রাখে। মেয়েরা বিয়ে করতে রাজি না হলে ছেলের বাড়ির মহিলারা মেয়ের মগজ ধোলাই করেন। এরপরও বিয়ের জন্য রাজি না হলে মেয়ের সাথে ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করা হয়। এই ঐতিহ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের কাহিনী শোনা যায়। কিন্তু, কিরগিজস্তানের দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এই অবস্থার কোন পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। সেখানে বসবাসকারী একজন মেয়ে “রোজা”। তার জীবনের করুণ কাহিনী এখানে তুলে ধরা হল- রোজা’কে ১৯ ও ২৩ বছর বয়সে দুইবার করে অপহরণ করা হয়। প্রথমবার তাকে অপহরণ করে ছেলে তার বাসায় নিয়ে যায়। তখন তাকে চা-নাস্তা করানো হয় এবং ছেলের মা তাকে ছেলের সকল প্রশংসার কথা বলতে থাকেন এবং বিয়ের জন্য রাজি হতে বলেন। তিনি মানা করে দেন, বিধায় পরিবারের বাকি সদস্যরা তাকে এসে বুঝাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাকে হুমকি দেয়া শুরু করে। সারারাত তাকে বুঝানোর কার্যক্রম চলে, তার উত্তর ‘না’ই থাকে। পরের দিন সকালে তাকে তার মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। তিনি বিবাহের জন্য রাজি হয়নি বিধায় তার বাবা তাকে অনেক কথা শুনায়। তারা মনে করেন, মেয়ের বিয়েতে মতামত না থাকার কারণে তারা অপমানিত হয়েছেন। পরবর্তীতে ২৩ বছর বয়সে তাকে আবার অপহরণ করা হলে তাকে নিয়ে যেয়ে ধর্ষণ করা হয়। দু’বারই তার উত্তর না ছিল। বর্তমানে রোজা তার নিজ পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে দুটি সন্তানের জননী হয়েছেন। সেখানে, অপহরণ করাকে কোন খারাপ কাজ মনে করা হয় না। কিন্তু মেয়েরা যদি বিয়ের জন্য রাজি না হয়, তাহলে তাদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এ ধরণের নৃশংস কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু, এখনও তা যথেষ্ট নয়। প্রতিদিন প্রায় ৩২জন নারীকে বিবাহের জন্য অপহরণ করা হয়। এরকম ৭০০ মামলা থেকে মাত্র একজন দোষীকে কাঠগড়ায় দাড় করানো যায়। বেশীরভাগ মহিলা ভয়ে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়, আবার অনেকে নিজের জীবন নিজ হাতেই শেষ করে ফেলে।



মন্তব্য চালু নেই