কন্যা সন্তানকে যে কথাগুলো বলা উচিত নয় একেবারেই

যদি এক বা একাধিক মেয়ে সন্তান থাকে তাহলে তাঁদের সাথে কথা বলার সময় আপনাকে কিছু বিষয়ে সতর্ক হয়ে কথা বলতে হবে। অনেক পিতামাতাই এমন কিছু কথা তাঁদের কন্যা সন্তানকে বলে থাকেন যার ফলে মেয়ে সন্তানের বৃদ্ধিতে, আত্মবিশ্বাস তৈরিতে এবং অন্য সব কিছুতেও খারাপ প্রভাব ফেলে। কমবয়সী মেয়েদের সবকিছু অনেক সিরিয়াসলি নেয়ার প্রবণতা থাকে। তাই আজ আসুন জেনে নেই সেই কথা গুলো যা কোন পিতামাতারই তাঁদের মেয়ে সন্তানকে বলা ঠিক নয়।

১। “এই বিষয়ে তুমি এখনও খুব ছোট” মেয়েরা কখনো দায়িত্বে অবহেলা করেনা। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি চিন্তাশীল হয়। প্রতিটা শিশুই কল্পনা প্রবণ হয়। কিন্তু মেয়েরা অনেক ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে। কোন ছোট শিশুকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, বড় হয়ে সে কী হতে চায়? ছেলে শিশুর উত্তর হবে- জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা ম্যাজেসিয়ান আর মেয়ে শিশুর উত্তর হবে কিছুটা ভিন্ন রকম। সাধারণত তাঁদের উত্তর…

হবে- শিক্ষক, ডাক্তার অথবা অভিনেত্রী হওয়া। তাঁদের কল্পনাশক্তি কম বা উচ্চাশা কম এজন্যই এমন উত্তর দেয়, এটা আসলে ঠিক নয়। বরং তাঁদের বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশিই থাকে। বেশির ভাগ কন্যা সন্তানের মধ্যেই তাঁদের স্বপ্নের রাজপুত্রের সাথে মিল আছে এমন কারো সাথে বিয়ে হওয়াটাই তাঁদের স্বপ্ন থাকে। কারণ তাঁকে এটাই শেখানো হয়। যদি আপনার কন্যা সন্তানটি আপনাকে তাঁর ভবিষ্যৎ ইচ্ছার কথা বলে তাহলে কখনই তাঁর ক্ষমতাকে ছোট করে দেখবেননা। তাঁকে থামিয়ে না দিয়ে বরং তাঁর স্বপ্ন পূরণে তাঁকে সাহায্য করুন। তাঁর আত্মবিশ্বাস কমে যায় এমন কোন মন্তব্য না করে বরং তাঁকে বলুন, “যদি তুমি পরিশ্রম কর তাহলেই তুমি সকল বাঁধা অতিক্রম করে তোমার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে”।

২। “তুমি এটা কখনোই করতে পারবেনা” পিতামাতার সবচেয়ে খারাপ কথা হচ্ছে যখন তাঁরা তাঁদের কন্যা সন্তানকে বলেন যে, ‘তোমার দ্বারা কিছুই সম্ভব না’ বা ‘তুমি এটা কখনোই করতে পারবেনা’। যদি আপনার কন্যা সন্তানটি শিক্ষক অথবা উকিল হতে চায় কিন্তু সে পড়াশুনায় খুব একটা ভালো করছে না, তখন তাঁকে বলে বসবেন না যে, “তুমি একজন লইয়ার হওয়ার মত যথেষ্ট বুদ্ধিমান না’। বরং তাঁকে পড়াশুনায় ভালো হওয়ার জন্য সাহায্য করুন এবং তাঁকে কিছু বই ও ভিডিও সংগ্রহ করে দিন যা দেখে ও পড়ে সে ওই পেশা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই চান না যে আপনার মেয়েটি লাজুক হোক এবং তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভয় পাক। তাই তাঁকে “তুমি পারোনা’, “তুমি পারবেনা’ এবং “তোমার বুদ্ধি কম” এই কথা গুলো বলবেন না। তাঁকে নতুন কিছু করতে উৎসাহিত করুন।

৩। “বাচালের মত কথা বোলনা” ছোট মেয়েদের অনেক বেশি কথা বলার প্রবণতা থাকে। এটা সময়ের সাথে সাথে অনেক বাড়তে পারে। কিন্তু ছোট বেলার তুচ্ছ অনর্থক কথা গুলোকে আপনি যদি না শোনেন, তাহলে সে যখন বয়ঃসন্ধিতে যাবে তখন তাঁর জীবনে কী ঘটছে সেটা জানতে চাইলে আপনাকে চুপ করিয়ে দিবে অর্থাৎ আপনার সাথে শেয়ার করবেনা।

৪। “শুধু ছেলেরাই এটা করতে পারে” বর্তমান বিশ্বে মেরেরা যেকোন পেশা, যেকোন খেলা এবং ভিন্নরকম কোন কাজ করার সুযোগ আছে। আপনার মেয়ে যদি এমন কোন পেশাকে বেঁছে নিতে চায় যা সাধারণত ছেলেরাই করে থাকে তবে তাঁকে নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়। শায়না নেহাল ভারতের অলিম্পিক মেডেল বিজয়ী প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলোয়ার। যিনি World Federation Women’s Singles 2015(badminton)এর র‍্যাংকিং-এ এক নাম্বারে আছেন।

৫। “কর্কশ কন্ঠে কথা বলোনা বা রুঢ় হয়োনা” জীবনে কখনো কখনো রুঢ় আচরণ করতে হয়, নিজের জন্য দৃঢ় ভাবে কথা বলতে হয়। কিন্তু প্রাচীন একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, মেয়েদের সব সময় নরম আচরণ করতে হয় এবং অন্যকে খুশি রাখাই তাঁর কাজ এর ফলে বাস্তবে দেখা যায় যে, যে অন্যকে বেশি খুশি করতে চায় তাকেই অন্যরা ঘৃণা করে। “অন্যরা কি ভাববে”, “তুমি সুন্দর না”, “বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবে”, “এই ড্রেসটা বা এই রঙটা তোমাকে মানাচ্ছে না”, “তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারোনা”, “বাসায় থাকো/টিভি দেখো”, “এটা ছেলেদের কাজ” ইত্যাদি কথা গুলো না বলে তাঁকে বলুন- “নিজের ক্ষুদ্রতাকে ঝেড়ে ফেলে দাও, সম্ভাবনার যে স্ফুলিঙ্গ তোমার ভেতরে আছে তাঁকে অর্জনের উজ্জ্বল শিখায় পরিণত কর”- উক্তিটি বিশ্বের তৃতীয় ও ইসরাইলের প্রথম মহিলা প্রধান মন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের।



মন্তব্য চালু নেই