কর্মকর্তাদের খুশি করতে ফের পদোন্নতির উদ্যোগ

প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো বা গতিশীলতার জন্য নয়, শুধু কর্মকর্তাদের খুশি করতেই ফের পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবারে অন্তত তিন স্তরে ৬ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আকস্মিক কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারিতে এ পদোন্নতি দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে এসব পদোন্নাতি দেয়া হবে। যাদের যোগ্য বলে মনে হবে তারাই পদোন্নতি পাবেন।

এবারে যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব থেকে যুগ্ম-সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদন্নোতি দেয়া হবে। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব থেকে কয়েজনকে সচিব করা হতে পারে।

জানা গেছে, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের পদ আছে ১০৭টি। কিন্ত এর বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৫৮জন। যুগ্মসচিবের পদ আছে ৪৩০টি । এর বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯০৪জন। উপসচিব পদ রয়েছে ৮৩০টি এবং বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৮৮জন। এছাড়া সচিব আছেন ৭৪জন।

সূত্র জানায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ধারিত পদের চেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা কাজ করছেন। বিশেষ করে অতিরিক্ত সচিব পদে ১৫১ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ৩৭৪ এবং উপসচিব পদে ২৫৮ জন অতিরিক্ত রয়েছেন। এর সঙ্গে আরো যোগ হচ্ছে ৬শ’ কর্মকর্তা।

প্রশাসনের ওই অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হলেও তারা আগের কাজই করছেন। এমনকি পদোন্নতি পাওয়ার পর তাদের বেতন এক টাকাও বাড়েনি। কারণ ইনক্রিমেন্টের জন্য প্রতি বছর যে হারে বেতন বেড়েছে তাতে পদোন্নতি পাওয়ার পর ওই বেতনই হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি, হয়েছে কর্মর্কতাদের।

এদিকে সহকারী সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদের চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব (সহকারি কমিশনার) পদে কর্মরত আছেন ১হাজার ৪৩৪ জন। এর বিপরীতে পদ আছে ১ হাজার ৮শ’।
আর সহকারী সচিব (সহকারী কমিশনার) কর্মরত আছেন ১ হাজার ৯৫জন। এ পদে আরো ৫ শতাধিক কর্মকর্তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

পদ নেই তারপরও পদোন্নতির উদ্যোগ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করেছি। কিন্ত কোনো দিন শুনিনি পদ না থাকলে পদোন্নতি দেয়া যায়। তিনি বলেন, পদোন্নাতির প্রথম শর্তই হচ্ছে শূন্য পদ থাকতে হবে। তারপর যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখা হয়।

আবারো পদোন্নতি সম্পর্কে এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।  এ পদোন্নতি কর্মকর্তাদের স্বার্থে হচ্ছে, রাষ্ট্রের স্বার্থে হচ্ছে না।

তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যোগ্যতম ব্যক্তির পদোন্নতি না হলে তার কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। অনেকটা অবহেলা চলে আসে। এতে রাষ্ট্রের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি ক্ষতি হয় ওই কর্মকর্তারও।

জনপ্রশাসনের উপরের স্তরের কর্তকর্তা বেশি আর নীচের স্তরের কর্মকর্তা কম হওয়ায় প্রশাসনের আদর্শ কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আদর্শ কাঠামো হলো অনেকটা পিরামিড আকৃতির। অর্থাৎ নিচের দিকটা থাকবে ছড়ানো আর উপরের দিকটা থাকবে সরু।

আরো পরিস্কার করে বলা যায়, সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকবে সহকারি সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে। কিন্তু বর্তমানে এর চিত্র পরোপুরি উল্টো। উপরের দিকের অফিসারের সংখ্যা বেশি। নিচের দিকে কম। যার ফলে জনপ্রশানের কাঠামো মাথাভাড়ি হয়ে দাঁড়িয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই