কর্মসূচি ডেকে মাঠে নেই ছাত্রদলের ৭৩৪ নেতার ৩৪ জনও!

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মাঠে নামেননি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে গঠিত ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্তত ৩৪ নেতাকেও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি!

শনিবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল ৯০ এর দশকে রাজপথ কাঁপানো এ সংগঠনটি। তবে কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দিনভর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদেরকে আত্মগোপন কৌশলই ছিল বেশ লক্ষণীয়।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সামনে মাইক্রোফোন হাতে পেলেই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার মৌখিত আশ্বাস দেয়া নেতাদের রাজপথে না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন ইউনিটের কয়েকজন নেতা। কমিটির পরিসর বড় করলেই আন্দোলন সফল হয় না বলেও মত দেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার জারির প্রতিবাদে ডাকা এ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক শীর্ষ নেতাই ছিলেন আত্মগোপনে। এমনি রেকর্ড সংখ্যক নেতা নিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতাকে কর্মসূচি পালনের চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি।

প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সরব থাকেন ছাত্রদলের এমন একজন সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান বিক্ষোভের সমর্থনে কোন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

‘আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির চাপ নেই তারপরও কেন কর্মসূচির সমর্থনে রাজপথে নামেননি’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নয়াপল্টনে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় নিদের্শনা না পাওয়ায় কর্মসূচি পালন করা হয়নি।

এদিকে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন বলেন, ম্যাডামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাই বিবেকের তাড়না থেকে বৃহস্পতিবারই রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রয়েল, কিডনির সমস্যায় রাজাধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাই কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। তবে তিনি মনে করেন, ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটির পঞ্চাশ ভাগের বেশি নেতাদেরকে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি চেনেন না। নেতাকর্মীরা তাদের কথা শুনছেন না বলেও মনে করেন তিনি।

গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে যতটুকু কর্মসূচি পালিত হয়েছে নিজ দায়িত্বে নেতাকর্মীরা পালন করছে বলেও দাবি করেন ছাত্রদলের এ নেতা।

কর্মসূচি ডাকার পরও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি কেন, জানতে চাইলে দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আবদুস সাত্তার পাটওয়ারির বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন ইউনিটে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে অনেক বড় পরিসরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়েছে, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী কতজন নেতা শনিবার কর্মসূচি পালন করেছেন, জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি।

তবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, সিদ্ধান্তের জটিলতার কারণে কর্মসূচি পালনে সমস্যা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে এসেও অনেকে ফিরে গেছে। আজকের কর্মসূচি বিভিন্ন ইউনিট পালন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে ছাত্রদলের সাবেক একজন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদকের কাছে ‘কর্মসূচি ডেকেও এত বড় কমিটির নেতারা কেন রাজপথে নামছে না’ জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দফতর থেকে জানানো হয়, দেশব্যাপী জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।



মন্তব্য চালু নেই