কাউকে অভিশাপ দেওয়ার ব্যাপারে যা বলছে ইসলাম

লানত’ বা অভিসম্পাতের অর্থ হলো, আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরে সরে পড়া। যার ওপর আল্লাহর লানত পতিত হয়, সে কখনো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না। পরিণতিতে সে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অপমান-অপদস্থতা অর্জন করে।

যেসব কাজে নেমে আসে আল্লাহর অভিশাপ রাসুল (সা.) বলেছেন, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদসংক্রান্ত দলিল সম্পাদনকারী ও সুদের লেনদেনের সাক্ষী—সবার প্রতিই আল্লাহর অভিশাপ। (মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি লুত (আ.)-এর জাতির মতো (সমকামিতার) অপকর্মে লিপ্ত হবে, সে অভিশপ্ত হবে। (মিশকাত) অন্য এক হাদিসে এসেছে : আল্লাহ তাআলা লানত করেন মদ্যপায়ীর প্রতি, মদ যে ব্যক্তি পান করায় তার প্রতি, তার বিক্রেতা ও ক্রেতার প্রতি, যে মদের জন্য নির্যাস বের করে তার প্রতি এবং যারা মদ বহন করে—তাদের সবার প্রতি। (মিশকাত)

রাসুল (সা.) এমন পুরুষের প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষ নারীদের পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (মিশকাত)

এ ছাড়া রাসুলে কারিম (সা.) সেই সব পুরুষের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা নারীদের মতো আকার-আকৃতি ধারণ করে হিজড়া সাজে এবং সেই সব নারীর ওপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষালি আকৃতি ধারণ করে। (বুখারি)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ছয় ধরনের লোক আছে, যাদের প্রতি আমি অভিসম্পাত করেছি এবং আল্লাহও অভিসম্পাদ করেছেন। সে ছয় ধরনের লোক হলো—এক. আল্লাহর কিতাবে যারা কাটছাঁট করে। দুই. যারা বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করে এবং সম্মানিত লোকদের অপমানিত করে আর অপমানিত লোকদের সম্মানিত করে। তিন. যারা ‘তাকদির’ বা নিয়তিকে অবিশ্বাস করে। চার. যারা আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুকে হালাল মনে করে। পাঁচ. বিশেষত কুরাইশ বংশের যারা হারামকে হালাল করে নেয়। ছয়. যারা আমার সুন্নতকে (কটাক্ষ করে) বর্জন করে। (বায়হাকি)

মানুষ মানুষকে অভিশাপ দিতে পারে?

ক্রোধান্বিত ও রাগান্বিত হয়ে অন্যকে অভিশাপ দেওয়া এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে ‘লানত’ শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অথচ এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে লানত বা অভিশাপ দেওয়া সর্বাবস্থায় হারাম। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত করা যাবে না, যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে নবী করিম (সা.)-এর বক্তব্য নিম্নরূপ : যে বিদ্রূপ করে, লানত করে ও অশ্লীল কথা বলে, সে মুমিন নয়। (তিরমিজি)

তবে কুফরি অবস্থায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত জানা থাকলে তার ওপর লানত করা জায়েজ। যেমন—আবু জাহেল, আবু লাহাব প্রমুখ। (শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮৩৬)

আবার কারো নাম উল্লেখ না করে এভাবে লানত করা জায়েজ যে জালিমের ওপর কিংবা মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।

ইসলামের ধর্মীয় উদারতা

ইসলামে ধর্মীয় উদারতা গগনচুম্বী। চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিধান নয় এটি। এর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে সবাই তা গ্রহণ করবে—এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম এমন এক সর্বজনীন জীবনবিধান, যেখানে নেই কোনো সংকীর্ণতা বা সংঘাত। এতে রয়েছে উদারতা, বিশালত্ব ও গোটা সৃষ্টির প্রতি অসীম মমত্ববোধ। ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান করেনি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব নাগরিকের যথাযথ অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান করেছে। ইসলাম পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়, পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দেয়। ইসলাম পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে সবার সহাবস্থান সুনিশ্চিত করে। অন্যের ধর্ম-মতাদর্শকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে এসেছে : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৮)

মানবসমাজে অশান্তি সৃষ্টি, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এর মধ্যে বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
লেখক : ইমাম, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া মসজিদ
সুত্র-কালের কন্ঠ



মন্তব্য চালু নেই