কাউন্সিল বসুন্ধরা কনভেনশনে, ১১ উপকমিটি

মার্চে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলকে সামনে রেখে ভেন্যু চূড়ান্ত এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ১১টি উপকমিটি করেছে বিএনপি।

রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে দলটির শীর্ষ নেতারা পৃথকভাবে এই কমিটিগুলোর দায়িত্বে থাকছেন। আর পুরো কাউন্সিলের চিত্র দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবহিত করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি (খালেদা জিয়া) কাউন্সিলের ভাল-মন্দ পর্যালোচনাও করবেন।

বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে এসব চূড়ান্ত করেছেন খালেদা জিয়া। বৈঠক সূত্রে এ বিষয়ে জানা গেছে। এর আগে রাত সোয়া ৯টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়ে শেষ হয় রাত পৌনে ১২টায়।

বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, বেগম সারোয়ারি রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ড. আবদুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় কাউন্সিলের পুরো দায়িত্ব পালন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধন উপ-কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন।

সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন বিগত কাউন্সিলে এ দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খান। তবে তার অসুস্থতাজনিত কারণে এ দায়িত্বে বিকল্প হিসেবে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।

এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ শৃঙ্খলা ও সেবাদান উপ-কমিটির দায়িত্বে থাকছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার জন্য খোকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার আসা এক প্রকার অনিশ্চিত। এ ছাড়া মির্জা আব্বাস কারাগারে রয়েছেন, তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে তিনি কাউন্সিলের আগে মুক্তি পাবেন। শেষ পর্যন্ত না পেলে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতিতে ঢাকা মহানগর কমিটির ওপরই আপ্যায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনায় ঢাকা মহানগর নেতা আবুল বাশার দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ড্রাফট উপ-কমিটি ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব থাকছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপ-কমিটির দায়িত্ব যৌথভাবে পালন করবেন প্রবীণ সাংবাদিক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক শফিক রেহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে প্রকাশনা উপকমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে স্বাস্থ্য ও সেবা উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে অফিস ও যোগাযোগ উপকমিটি, সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকছেন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল পুনর্গঠন করে বিএনপি। ২০০৯ সালের জুন মাসে একসঙ্গে ৭২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই বছর ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল। পরের বছর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় ৩৮৬ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি। তিন বছর মেয়াদি কমিটির সময় আড়াই বছর আগেই শেষ হয়েছে। এর আগে দুই দফা কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে গত ২৩ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মার্চে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কাউন্সিল হয়। দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর এর আট বছর পর ১৯৮৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দলটির তৃতীয় কাউন্সিল। ১৯৯৩ সালের ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপি চতুর্থ কাউন্সিল করে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর হয় পঞ্চম কাউন্সিল।



মন্তব্য চালু নেই