কাজী জাফরের মৃত্যুর পরেও জেদ কমেনি এরশাদের!

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের চার শীর্ষনেতাদের একজন ছিলেন সদ্য প্রয়াত কাজী জাফর আহমদ। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সাম্প্রতিক কয়েক বছর  দু’জন ছিলেন দু মেরুর বাসিন্দা । সেই কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুর পর একনজরের জন্যও তাকে দেখতে গেলেন না এরশাদ । এমনকি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে যাতে দলীয় কেউই দেখতে না যান, সে জন্যে এরশাদ একপ্রকার ‘ নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেন বলে অনুযোগ উঠেছে।

বারিধারার বাসভবন ছেড়ে বনানীর নিজ কার্যালয়ে গেলেও দীর্ঘদিনের প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ কাজী জাফর আহমদকে একনজর দেখতে যাননি কিংবা তার শোকাহত পরিবারের পাশেও দাঁড়াননি তিনি। এরশাদের একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আকতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যারের নির্দেশে নেতাদের বারণ করা হয়েছে ‘ তিনি আরো বলেন, স্যার (এরশাদ) যে যাবেন, কাজী জাফর সাহেব তো সেই সুযোগ রেখে যাননি।’

একজন মৃত মানুষ সব সমালোচনা বা রাগ ক্ষোভের উপরেই থাকেন সবসময়ই । সে কারনেই এরশাদের এমন জেদি মনোভাবের কারনে বিষয়টি ইতমধ্যেই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন মহলে ।

এদিকে, কাজী জাফর আহমদকে দেখতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে পার্টির চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, মৃত্যুর পর রাজনীতি থাকে না। একজন চিরশত্রুও যদি মারা যায় মুসলমান হিসেবে শত্রুতা ভুলে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। জাতীয় পার্টির জন্য কাজী জাফরের অবদান রয়েছে। শত্রুতা ভুলে পার্টির চেয়ারম্যান যদি তার কাছে যেতেন, শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন, তাহলে সেটাই হতো সত্যিকার রাজনীতি। ওই দলের নেতারাও ফিরে আসতেন আমাদের জাতীয় পার্টিতে। এ ধরনের ভুলের কারণে দল দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান কার পরামর্শে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তিনিই জানেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এরশাদের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্য ইচ্ছা থাকলেও দলের নেতারা কাজী জাফরকে দেখতে যেতে পারছেন না। বিষয়টি জানতে কয়েকটি গনমাধ্যমের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুর খবর যখন এরশাদকে জানানো হয়, তখন তিনি বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে ছিলেন। দলের শীর্ষ নেতারাও এ সময় কাজী জাফরের মৃত্যুর খবর দেন দলের চেয়ারম্যানকে। তাদের কেউ কেউ কাজী জাফরের বাসায় যাবেন কি না জিজ্ঞেস করলে এরশাদ নীরব থাকেন। কিছুক্ষন পরেই রাগ এবং ক্ষোভের সাথে কাজী জাফরের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব করে সবাইকে যেতে স্পস্ট নিষেধ করেন প্রাক্তন এ রাষ্ট্রপতি।

জানা গেছে, নির্বাচন বর্জনের প্রশ্নে দলবল নিয়ে জাতীয় পার্টি ছেড়ে গিয়ে এরশাদকে বেইমান ও বিশ্বাসঘাতক বলায় কাজী জাফর আহমদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। যে কারণে তার মৃত্যুর পরও সহানুভূতি দেখাতে যাননি এরশাদ। এমনকি ক্ষুব্ধ মনোভাবের কারণে নেতাদেরও বারণ করেছেন তিনি। তবে এরশাদের এই নিষেধাজ্ঞার পরও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, যুগ্ম মহাসচিব আলমগীর সিকদার লোটনসহ নেতা-কর্মীরা কাজী জাফরের বাসায় ছুটে যান।



মন্তব্য চালু নেই