কারখানা শ্রমিক থেকে মহাকাশচারী হলেন যেভাবে
সময়টা ছিল ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন। সোভিয়েত মহাকাশচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমন করেন। মোট ৪৮টি কক্ষপথ এবং ৭১ ঘণ্টা অতিক্রম করার পর তিনি পৃথিবীর মাটিতে ফিরে আসেন। ওই একই দিনে সোভিয়েত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারী যারা মহাকাশে গিয়েছিলেন, সবার তুলনায় অধিক সময় কাটিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অথচ ১৬ জুন তারিখের আগে এই ভ্যালেন্তিনাকে কেউই চেনাতো দূরের কথা, কেউ নামও শোনেনি। কারণটাও অবশ্য স্বাভাবিক, কারখানা শ্রমিক থেকে একজন নারী যে মহাকাশে পর্যন্ত যেতে পারে তা কে ভেবেছিল।
১৯৩৭ সালে রাশিয়ার মাসলিন্নিকোভোতে এক কৃষক পরিবারে জন্মান ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। বয়স ১৮ বছর হতে না হতেই পরিবারের খরচ মেটাতে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ নেন তিনি। আর ২২ বছর বয়স আসতেই স্থানীয় এক অ্যাভিয়েশন ক্লাবের সদস্য হয়ে প্রথমবারের মতো প্যারাস্যুট লাফ দেন তিনি। আকাশ থেকে ঝাপিয়ে পরার এই উৎসাহই একদিন তাকে নিয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ প্রকল্পে। এই মহাকাশ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তেরেসকোভাকে একটি বিশেষ প্যারাসুট নিয়ন্ত্রন করার ব্যাপারে পারদর্শী করে তোলা হয়। মহাশূণ্যে যাবার পর প্রায় বিশ হাজার ফুট দূরত্বে ক্যাপসুল থেকে ইচ্ছাকৃত বের হয়ে আসতে ওই প্যারাস্যুটটি কাজে লাগে। ১৯৬২ সালে সফলভাবে প্যারাস্যুট জাম্প দেয়ার কারণে প্রথম নারী হিসেবে তাকে নির্ধারিত করা হয়। এরপর একজন নারী বৈমানিকের নিবিঢ় তত্ত্বাবধানে মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়াদি শিখতে শুরু করেন তেরেসকোভা।
১৯৬৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাশাপাশি দুটো মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করে। ভোস্টক ৫ নামে এক মহাকাশযান মহাকাশে পাঠানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ভোস্টক ৫ এখনও পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। অন্যদিকে ভোস্টক ৬ এর আওতায় তেরেসকোভা মহাকাশে যান ১৬ জুন। এই মহাকাশযান দুটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একই কক্ষপথে আসে এবং তিন মাইল দূরত্বে তারা নিজেদের তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে। তেরেসকোভার মহাকাশযানটি ছিল স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রিত এবং ওটার কোনো ম্যানুয়েল ব্যবস্থাই ছিল না। জুন মাসের ১৯ তারিখ ভোস্টক ৬ আবারও পৃথিবীর আবহাওয়ায় প্রবেশ করে এবং তেরেসকোভা সফলভাবে বিশ হাজার ফুট দূরত্ব থাকতেই পৃথিবীর উদ্দেশ্যে প্যারাসুট উন্মোচন করতে পারেন।
এই ঘটনায় তেরেসকোভার প্রতি খুব খুশি হন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রধান লেনিন। মহামতি লেনিন তেরেসকোভাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৬৩ সালের দিকে তেরেসকোভা সহকারী মহাকাশচারী আদ্রিয়ান নিকোলেভকে বিয়ে করেন। কারণ এই দুই অবিবাহিত মহাকাশচারীকে নিয়ে কিছু ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতেই সোভিয়েত নেতা নিকিতা কুশ্চেভের হস্তক্ষেপে এই দুই মহাকাশচারীর বিয়ে হয়। ১৯৬৬ সালে তেরেসকোভা সোভিয়েত জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করার পর তিনি আর মহাকাশে যাননি।
ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা যে সময় মহাকাশে যান সেসময় যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে নারীদের পাঠানোর কথা চিন্তাও করেনি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে কিছু নারীকে যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ অভিযানের জন্য তালিকাভূক্ত করলেও পরবর্তী সময় তারা পরীক্ষায় পাশ না করায় আর নারীদের নিয়ে আগায়নি দেশটি। এরপর ১৯৮৩ সালে প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে স্যালি রাইড প্রথম মহাকাশ অভিযানে যান।
মন্তব্য চালু নেই