কারাগারে বঙ্গবন্ধুর লাগানো সেই কামিনী গাছটি এবং আরো কিছু স্মৃতি

যার নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের পর বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় সেই অমর নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়ে গেছে তার অসংখ্য স্মৃতি।

এর একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপন করা একটি কামিনী গাছ। কারাগার সূত্র জানিয়েছে, ৬০ এর দশকে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে এই গাছের চারাটি লাগিয়েছিলেন। হয়ত সাধারণ খেয়ালেই কিংবা কয়েদি হিসেবে কাজের সূত্রে। কিন্তু, নিতান্তই চারা থেকে সেই গাছ এখন মহীরুহ, চারপাশে ডালপালা ছড়িয়ে নিজের উপস্থিতি ঘোষণা করছে সগৌরবে, অর্ধ শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে থাকা এই গাছটি যেন বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত স্মৃতি।

কারাগারে আজও আছে বঙ্গবন্ধুর নিত্য ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসপত্র। পুরনো কারাগারের ভেতরে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার স্মৃতি বিজড়িত সেইসব জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সংগ্রহশালা, গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। আর প্রথমবারের মতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলছে আগামীকাল বুধবার (২ নভেম্বর) থেকে।

পুরনো কারাগারের দেওয়ানি সেলে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিন ছিলেন। সেখানে রয়েছে তার ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল, খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, হাঁড়ি-পাতিলসহ তার একটি ম্যুরাল। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর এসব স্মৃতিকে ধরে রাখতে দেওয়ানি সেলকে রূপান্তর করা হয় ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর’। যা ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

২২৮ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আরও রয়েছে ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নৃশংসভাবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। সেই সেলগুলোও কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে তাদের ব্যবহার করা সামগ্রী। রয়েছে তাদের আলাদা আলাদা ম্যুরাল।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর’ ও ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন সবাই। কারাগারে স্মৃতি বিজড়িত অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার দুর্লভ কিছু ছবি নিয়ে প্রদর্শিত হবে ‘সংগ্রামী জীবনগাঁথা’ নামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

মঙ্গলবার বিকালে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে। ২ নভেম্বর থেকে সাধারণ দর্শনার্থীরা কারাগারের ভেতরে প্রবেশ ও দুটি জাদুঘরসহ আশপাশ ঘুরে দেখতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিনটি সেশনে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা প্রথম, দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং তৃতীয় সেশনে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। কারাগারে প্রবেশ করতে জনপ্রতি টিকেট লাগবে ১০০টাকা।

প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সাবেক প্রতিনিধি ইমিরেটাস প্রফেসর ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি প্রিজন) কর্নেল ইকবাল হাসান বলেন, ‘জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে ১৪৫টি দুর্লভ ছবি দেখার সুযোগের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো কারাগার ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ জনগণ। এর আগে কখনও কারাগারের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ সাধারণকে দেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, টিকিট মূল্য ১০০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নতুন কারাগারে মহিলা বন্দিদেরে সন্তানদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয়ে খরচ হবে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। পুরনো কারাগারকে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানকার ঐতিহাসিক ভবনগুলো সংরক্ষণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

বিনোদনের জন্য পার্ক, জাদুঘর, উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চসহ থাকবে নানা আয়োজন। এছাড়া সম্প্রতি টাকা বিনিময়ে জেলের স্বাদ সাধারণ জনগণকে দেওয়ার জন্য ‘ফিল দ্য প্রিজন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। পুরনো কারাগারকে নতুন রূপে সাজাতে অন্তত আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে। -বাংলা ট্রিবিউন।



মন্তব্য চালু নেই