কারা থাকছেন কমিশনে : চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা : কমিশনে কারা আসছেন, কীভাবে তাদের নিয়োগ হবে, আগামী নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ হবে। এ নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠও। সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চায়ের টেবিল থেকে হাট-বাজার সবখানেই একই আলোচনা। আগামী ফেব্র“য়ারিতে বর্তমান কমিশনের বিদায়ের পর আসবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তাদের অধীনে হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। তবে ইসি নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ নাও হতে পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাইছে না সরকারও। ক্লিন ইমেজের লোকদের ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এ রকম বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে জোর আলোচনায় রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভিসি ও কয়েকজন সাবেক সচিবের নামও আছে এ তালিকায়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী অধ্যাপকের নামও আলোচনায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনর্গঠিতব্য পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে অন্তত একজন নারী কমিশনার রাখার পক্ষে নানা মহল থেকে দাবি আসছে। রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারিসহ নানা পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের চলমান প্রক্রিয়ায় যোগ্যদেরও ইসিতে স্থান দেওয়ার পক্ষে এ মত আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা রাখার পর নির্বাচন কমিশনেও একজন নারী কমিশনারের প্রস্তাব রাখে তৎকালীন ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী জাতীয় পার্টি ও বিএনপি নেতারা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নের চলমান প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনেও একজন নারী সদস্য নিয়োগ হলে ভালো হয়। তবে সবার আগে যোগ্য লোকদের নিয়ে নিরপেক্ষ কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টিই মুখ্য বলে মত দেন তারা।খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের।
একজন নারী নির্বাচন কমিশনার নিয়ে ‘সিইসি ও ইসি নিয়োগসংক্রান্ত’ আইন প্রণয়নের জন্য খসড়া প্রস্তাবনাও রেখেছিল বিগত ড. এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন। এদিকে ‘নবম সংসদ নির্বাচন’ বর্জনকারী দল বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনে কীভাবে আগামী নির্বাচন হবে সে বিষয়ে গতকাল বিএনপির প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই কমিশন হতে হবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন?্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারাও সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির নেত্রী। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনে চলছে বিদায়ের প্রস্তুতি। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আছে আর মাত্র ৮২ দিন। আগামী ফেব্র“য়ারিতে বিদায় নিতে হবে। ইতিমধ্যে নিজ নিজ ফাইলপত্র গোছানো শুরু করেছেন কমিশনাররা। তবে বিগত হুদা কমিশন বিদায়ের আগে ‘ইসি নিয়োগসংক্রান্ত আইনের আলাদা খসড়া’সহ নির্বাচনী আইন সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ রেখে গেলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বর্তমান ইসির। বিদায়ের আগে নতুন কমিশন গঠন বা নির্বাচনী আইন সংস্কারে তাদের কোনো প্রস্তাবনা থাকছে না। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে। আইন হলে আইন হবে; যতদিন আইন না হয় ততদিন সংবিধান অনুসারে হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে মোতাবেক হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দ্রুত সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এ কমিটি গঠন হবে।
এ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তা থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক লোক বেছে নিয়ে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও গত চার দশকেরও বেশি সময়ে তা আর হয়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধানও রাখার প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনৈতিক মতৈক্য তৈরিতে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেই ২০১২ সালে পাঁচ সদস্যের বর্তমান ইসি গঠিত হয়। কিন্তু ইসি নিয়োগে কোনো আইন না হলেও গেলবারের মতো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নতুন ইসি আসছে। যাদের অধীনে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ (১)-এ বলা হয়েছে : ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারও আগের প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ হবে। সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১২ সালে যেভাবে বর্তমান ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারও সেভাবেই হবে। তারা বলেছেন, সংবিধানের আলোকে ইসি নিয়োগে আইন করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। রাষ্ট্রপতি যথাসময়ে সংবিধান অনুসারে ইসি নিয়োগ দেবেন। তবে ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবারে সংলাপ নাও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নামের সুপারিশ তৈরির জন্য চার সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারককে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হন হাইকোর্টের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান। এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অধিকাংশ দলই সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল। ইসি গঠন নিয়ে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপসহ ২৩টি দলের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি। এ সংলাপে অধিকাংশ দলই সংবিধান অনুসারে সিইসি ও ইসি নিয়োগে আলাদা আইন করা বা অনুসন্ধন কমিটির পক্ষে মত দেয়। সার্চ কমিটির আহ্বানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি কোনো নাম দেয়নি। এ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচ পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশের পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরদিন ৯ ফেব্র“য়ারি প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়েই তারা যোগ দেন ইসিতে।



মন্তব্য চালু নেই