কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে লেবুর রস

কিডনির ভিতরে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মত পদার্থ তৈরি হলে তাকে কিডনি পাথর বলা হয়। এই ক্রিস্টালের মত পদার্থ গুলো একত্রিত হয় এবং বৃদ্ধি পেয়ে পাথর তৈরি হয়। কিডনির ভিতরের এই পাথর গুলো নীচের দিকে অর্থাৎ মূত্র নালীর মাধ্যমে মূত্র থলিতে যাওয়ার চেষ্টা করে। পাথর যখন সংকীর্ণ নালীর মধ্য দিয়ে যায় তখন প্রচণ্ড ব্যাথা হয় এবং কখনো কখনো নালীটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চার ধরণের কিডনি স্টোন হতে পারে। এক প্রকার কিডনি পাথর বংশানুক্রমে হয়। অন্য তিন প্রকার কিডনি স্টোন যা ৮০% হয় ক্যালসিয়াম ভিত্তিক।

গত ৩০ বছরে কিডনি পাথরের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে চরমে। কিন্তু কেন সেটা অজানাই রয়ে গেছে। কিছু গবেষক মনে করেন যে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এই সমস্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হতে পারে, আবার কেউ কেউ মনে করেন সমস্যা নির্ণয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও হতে পারে। কারণ যাই হোকনা কেন, কিছু উপায়ে আপনি কিডনি পাথর প্রতিরোধ করতে পারেন এবং প্রাকৃতিক ভাবে এই পাথর গলানো ও সম্ভব।

সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মুসুম্বি লেবু বা যে কোনও লেবু জাতীয় ফলের রস কিডনি স্টোন হওয়া থেকে আমাদের শরীরকে প্রতিরোধ করে।

লেবুর রসে থাকে, যা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালের কারণেই প্রধাণত আমাদের কিডনিতে পাথর হয়।

ইউনিভার্সিটি অফ হাউজটনের অধ্যাপক জেফ্রি রিমার জানিয়েছেন, মিনারেল জমে শক্ত হয়ে আমাদের কিডনিতে জমে যায়। একেই আমরা কিডনির পাথর বলে থাকি। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ওবেসিটি থেকে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যে কোনও লেবুর রস এই জমাট বাঁধা ক্যালসিয়াম গলিয়ে দিতে সাহায্য করে।

যদি আপনার পরিবারের কারো কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে তাহলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একবার যাদের কিডনি পাথর হয়েছে তাদের পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের দীর্ঘ দিনের কিডনি রোগ আছে তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই কিডনিতে পাথর হতে পারে। কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ পানিশূন্যতা। এবার তাহলে জেনে নেই কিডনি পাথর প্রতিকারের উপায় গুলো সম্পর্কে।

১। প্রচুর পানি পান করুন

আপনার কোন প্রকারের কিডনি পাথর হয়েছে সেটা কোন ব্যাপার নয়। যদি কোন ব্যাথা না হয় তাহলে আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিবেন। বেশি করে পানি পান করলে কিডনি পাথর বাহির হয়ে যাবে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার চেষ্টা করুন যাতে আপনার ইউরিন ক্লিয়ার হয়, কারণ স্বচ্ছ প্রস্রাব দেখে বুঝা যায় যে, আপনার শরীর হাইড্রেটেড আছে।

২। আপেল সাইডার ভিনেগার ও অলিভ ওয়েল

এই উপাদান গুলো আপনার ঘরেই পাওয়া যাবে এবং কিডনি পাথর অপসারণের জন্য খুবই কার্যকরী। লেবুর রস ও অলিভ ওয়েল এর মিশ্রণ পেট ব্যাথার উপসর্গ কমাতে পারে। এই মিশ্রণটি খাওয়ার পরে ১২ আউন্স পানি পান করতে হবে। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ০.৫ আউন্স লেবুর রস ও ১২ আউন্স পানি মিশ্রিত করুন। পান করার পূর্বে মিশ্রণটির মধ্যে ১ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশান। ব্যাথা কমার আগ পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় মিশ্রণ দুটি চক্রাকারে পান করুন।

৩। ডালিমের রস

ডালিমের অপরিমেয় স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আলাদা ভাবে ডালিমের জুস ও এর বীজ কিডনি পাথরের জন্য শুদ্ধ প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে গণ্য করা হয়। ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা ডালিমের এসারবিক ও তিক্ততার জন্যই একে ব্যবহারের কথা বলেন। ভালো ফল পাওয়ার জন্য অরগানিক ডালিম বা তাজা ডালিমের জুস পান করুন।

৪। তরমুজ

অন্য সবজীর চেয়ে তরমুজ পটাশিয়ামে ভরপুর থাকে। এবং এতে প্রচুর পানি থাকে বলে পানিশূন্যতা রোধ করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদগণ তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেন কারণ তরমুজ মূত্রবর্ধক এবং কিডনি পাথরের প্রতিকার করে।

৫। আঙ্গুর

কিডনি পাথরের সবচেয়ে ভালো হোম থেরাপি হিসেবে গণ্য করা হয় আঙ্গুরকে। আঙ্গুর মূত্র বর্ধক এবং এতেও পটাশিয়াম থাকে পর্যাপ্ত পরিমানে। এতে অল্প পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড ও অ্যালবুমিন থাকে যা কিডনি সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও ক্যাফেইন, চিনি ও অ্যালকোহল মুক্ত পানীয় যেমন- আদা চা, তুলসি চা, ফলের রস, গ্রিনটি পান করুন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টি কিডনি পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদগণ স্বাস্থ্যবান কিডনির জন্য ‘কিডনি বিন’ বা ‘শিমের বীচি’ খাওয়ার পরামর্শ দেন। এনার্জি ড্রিংক ও সোডা খাওয়া বাদ দিন। কিডনি পাথর অপসারণ হওয়া পর্যন্ত ক্যালসিয়াম অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- বেরি জাতীয় ফল (স্ট্রবেরি), ইনস্ট্যান্ট কফি, চকলেট ও গাড় সবুজ শাক সবজি খাওয়া বাদ দিতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই