কিরণমালা ও ফ্লোরটার্চ থ্রি-পিচ শীর্ষে রাণীনগরে জমে উঠেছে ঈদের বাজার

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমিয়ে উঠছে রাণীনগরের ঈদ বাজার। ক্রমেই বাড়ছে দোকানিদের ব্যস্ততা। পাশাপাশি আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে দর্জিরাও । রাতভর সেলাই মেশিনের শব্দে সমাগম হয়ে থাকছে টেলার্সগুলো। ইতি মধ্যেই রাণীনগর বাজার এলাকায় টেইলার্স মালিকরা নতুন অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ছোট থেকে শুরু করে ভিআইপি দোকানের কারিগররা এখন দিনরাত ব্যস্ত। দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। তবে গতবারের চেয়ে এবার উপজেলার মার্কেট, বিপনিবিতান, শোরুমগুলোতে এখন ক্রেতাদের উপচেপড়ার ভিড়।

বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কসমেটিকস দোকান গুলোতে তরুন-তরুণী সহ সব বয়সের ক্রেতাদের বেশী সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেছাকেনা। রাণীনগর বাজার মার্কেট, উপজেলা মার্কেট , আবাদপুকুর , কুজাইল, বেতগাড়ী মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায় , ভারতীয় পোশাকে সয়লাব হয়ে উঠেছে। আগ্রাসনে ভারতীয় সিরিয়ালের নামে শাড়ি ও থ্রি-পিসে ভরপুর ছোট বড় মার্কেটগুলো। ভারতীয় পোশাকের মধ্যে “কিরণমালা” “ইস্কেলিলা” “ বিন্দান” “কটকটি” “বজ্রমালা” “হদিসমালা” “ফ্লোরটার্চ ” “ জলপরি” “ ইচ্ছেনদী” “ পারি” “ ঝিলিক” “ রাজকন্যা” “ লাবণ্য” “ ঝিলমিল” “ পাটিয়ালি” “ শঙ্কমালা” “ নন্দিনী” “ আখিঁ” “ পাখি” “ জলনুপুর” উল্লেযোগ্য। আগে ছিল“ মাসাক্কালি” “ জিপসি” “ ঝিলিক” “ বাহা” । গতবার ছিল “ পাখি”। এবারের ঈদে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় প্রধান্য পেয়েছে “কিরণমালা” “লেহেঙ্গা” ও “ফ্লোরটার্চ” থ্রি- পিচ নামের পোশাক।এবার কিরণমালার ঝড়। আর এর সুযোগ মত নিচ্ছেন বিক্রেতারা। কোন পোশাকে পুঁতি বা পাথরের কাজ করা থাকলেই নাম দেয়া হচ্ছে “কিরণমালা” ।

এই নামের ওপরেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মেয়েরা। এসব পোশাকের আগ্রাসনে দেশীয় পোশাকের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্রেতারা। অবৈধ পথে এসব পোশাক আশায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,অন্যদিকে দেশীয় পোশাকের চাহিদা দিন দিন কমছে। দোকানিরা বলছে এগুলো বৈধভাবে আমদানী করা হয়েছে। ভারতীয় থ্রি-পিসগুলোর বেশি ভাগেই নাম ভারতীয় ছবির নায়ক ও নায়িকাদের নামানুসারে করা হয়েছে।

ঈদের আমেজকে সামনে রেখে রাণীনগর সদর, আবাদপুকুর, বেতগাড়ী, কুজাইল, ত্রিমোহনী সহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট, বিপণী বিতানগুলো বর্ণীল সাজে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য রোকমারী দোকান থেকে মাঝে মাঝে মান ভেদে পণ্য সামগ্রীর বিশাল মূল্য ছাড় ও লাকী কূপনের সুর্বণ সুযোগের মাইকিং করা হচ্ছে। আর্কষনীয় এই সব অজানা অফারে কিছু কিছু তরুন-তরুণীরা সহ অনেকেই ছুটছেন সেই সব বিপনী বিতানগুলোতে।

বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আসা মামুন , রিতু, সুমি রানা, হোসেন , শিউলি, নারর্গীছ, নাজনীনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার থ্রি-পিসসহ ছেলেদের প্যান্ট ও শার্টের দাম খুব চড়া। তাই কাপড় কিনে বানাতে দিয়েছি। তবে মজুরী একটু বেশি। রাণীনগর বাজারের এশিয়া টেইলার্সের মালিক বিপ্লব ও হিরো টেইলার্সের মালিক মান্নান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ধানের দাম না থাকায় কৃষি প্রধান এ এলাকায় কৃষকরা নায্য মূল্যে না বিক্রয় না পারায় অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমানে কেনাকাটা করতে পারছেনা বলে চাপটা অনেকটাই কম।

তবুও শেষ সময়ে এসে চাপটা অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান। লোকজনরা শেষ সময়ে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাই কারখানার কর্মরত কারিগরদের সারা রাতভর কাজ করতে হয় বলে তাদের মজুরিও একটু বেশি দিতে হয় বলে মজুরিটা কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে। রাণীনগর বাজারের মীনা বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী সরোয়ার হোসেন বটু জানান, শিশু, মহিলা ও পুরুষের অত্যাধনিক পোষাকের সমারহ করা হয়েছে। কিরণমালা, পাখি, ফ্লোরটাচ, লংফ্রগ, বিস কটোন ও ঝিলিক সহ নামের বিভিন্ন পোষাক আমার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।

ষ্টেশন রোডের মামা-ভাগ্নে গার্মেন্টস’র স্বত্বধিকারী জাকির হোসেন জানান, দিন-রাত সমান তালে বিক্রয় হচ্ছে। দিনে গ্রাম অঞ্চলের ক্রেতাদের আনা-গোনা সব চাইতে বেশি। নতুন নামে ও ডিজাইনের জেন্স প্যান্ট, শ্যার্ট পাঞ্জাবী ও টি-শ্যার্ট রাখা হয়েছে বিক্রয়ও হচ্ছে ভাল। আবাদপুকুর মোবারক গার্মেন্টস মালিক মোবারক হোসেন ও মতিন গার্মেন্টস মালিক আব্দুল হালিম শিশির জানান, মায়ের দোয়া গামেন্টস মালিক রফিকুল ইসলাম জানান,গত বারের চাইতে এবার বেচা-কেনা বেশি । তবে “কিরণমানা” “ফ্রোরটার্চ ” ও “ লেহেঙ্গা” থ্রি -পিচ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শাড়ির দোকান গুলোতে এসেছে নতুন ডিজাইনের কাপড়। জামদানী, বটিক, টাঙ্গাইল, রাজশাহী সীল্ক, পাবনার শাড়ির পসরা সাজানো হয়েছে পর্যাপ্ত।

উল্লেখ্য, মুসলমানদের ধর্মীয় উৎস ঈদুল ফিতর প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবের আর মাত্র কয়েক দিন বাকী রাণীনগর বাসীর ঈদের কেনা-কাটা নির্বিঘœ করতে রাণীনগর সদর বাজার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল-মাসউদ চৌধুরী জানান।



মন্তব্য চালু নেই