কীভাবে বুঝবেন আপনার টিনএজার সন্তান ঝামেলায় জড়িয়ে গিয়েছে?

সত্যি বলতে কী, বয়ঃসন্ধি অর্থাৎ টিনেজ- এ সময়টা খুব বিপজ্জনক। এ সময়ে বাবামায়ের সাথে একটা দুরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এ সময়ে তারা অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে। ফলে তারা কোনো সমস্যায় জড়িয়ে গেলেও তা জানতে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ দেখে আপনি আঁচ করতে পারবেন আপনার সন্তানের জীবনে কোথাও কোন সমস্যা আছে। এসব লক্ষণের ব্যাপারে থাকুন সতর্ক।

টিনেজ বয়সে আচরণের কিছুটা সমস্যা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু তা যেন অস্বাভাবিক হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ ব্যাপারে দেখে নিতে পারেন Helpguide.org এর তথ্যগুলো। উঠতি বয়সে মানুষ অনেক রকমের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা চিন্তা করে থাকে বাবা-মাকে জানালে তারা নিজের মতো জীবনযাপন করতে পারবে না। ফলে তারা ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারে এবং সেটা পরিবারের কাউকে বলতেও পারে না। বড় ধরণের কোনো সমস্যায় যেন আপনার সন্তান না পড়ে, তার জন্য একটু সতর্কতা সবারই জরুরী। হাফিংটন পোস্টের ডক্টর ফিলের মতে, এমন পাঁচটি বিপদ সংকেত আছে যা দেখলে মনে হতে পারে সন্তানের জীবনে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

১) সে পরিবার থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলে

কিছুদিন আগেও পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো খুবই ভালো। কিন্তু সম্প্রতি সে নিজের মাঝে গুটিয়ে গেছে। বাসার বাইরে সে অনেকটা সময় কাটায়। অথবা বাড়িতে এসেও নিজের রুমেই মুখ গুঁজে পড়ে থাকে প্রায় পুরোটা সময়। এই ব্যাপারটা বিপদ সংকেত বটে। এক সময়ে যে বাড়ির সবার সাথে সময় কাটাতো অনায়াসে, এখন সে মোটেই অন্যদের সাথে থাকতে চায় না। সে যদি বাবা অথবা মায়ের থেকে দূরে সরে যায় হুট করেই, তাহলে তার পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে। এই কারণটা খুঁজে বের করুন। পরিবারের সবার সাথে ঝগড়া,

২) তার মেজাজে এবং আচরণে হুটহাট পরিবর্তন আসছে

খুব ভালো মেজাজে আপনার সাথে কথা বলছে টিনেজার সন্তান। হুট করেই সে রেগে থম মেরে গেলো। আগে সে রান্না করতে পছন্দ করতো, এখন পুরোপুরি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। ধুলো জমছে শখের নভেলগুলোতে। এটাকে বয়সের দোষ বলে উড়িয়ে দেবেন না। সে হয়তো বন্ধু নির্বাচনে ভুল করে ফেলেছে। হয়তোবা তার মাঝে হরমোনগত, সামাজিক বা মানসিক পরিবর্তন আসছে। এটাকে এড়িয়ে যাবেন না। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আপনার সন্তানের আচরণ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে তার আচরণে কোনো সমস্যা দেখলে তার উৎস খুঁজে বের করুন। হঠাৎ করে বন্ধুর গ্রুপ পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক। এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে অনিদ্রা, ক্ষতিকর মাত্রার দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা।

৩) সে মাদক সেবন করে

অনেক সময়ে বাবামায়ের অজান্তেই তাদের নিতান্ত সুবোধ সন্তান নিছক কৌতূহলের বশেই ড্রাগ নিয়ে থাকে। ভাবছেন আপনার ভালো ছেলে/মেয়েটি এমন কাজ কখনোই করবে না? আপনি আশা করতেই পারেন। কিন্তু ড্রাগ নেবার লক্ষণগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা ভালো। তার বেডরুমেও কোথাও ড্রাগ নেবার সরঞ্জাম যেমন সিরিঞ্জ বা পুরিয়া থাকতে পারে। আপনি তাকে যতো বেশি অন্ধের মতো বিশ্বাস করবেন, আপনার চোখ ফাঁকি দেওয়া তার জন্য ততই সহজ হবে।

৪) আপনার পরিবারে মাদক সেবনের ইতিহাস আছে

পরিবারে কেউ যদি অতীতে কখনো মাদক সেবন করে থাকে, তাহলে সে পরিবারের টিনেজ সন্তানদের মাঝে মাদক সেবনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর মানে এই না যে আপনার সন্তান মাদক নেবেই। কিন্তু এর সাথে জিনগত সম্পর্ক থাকতে পারে অথবা পরিবেশের কারণেও হতে পারে। সতর্ক থাকলেই ভালো।

৫) সে ঝুঁকি নিচ্ছে

এ সময়ে কিছু কিছু টিনেজারের আচরণ খারাপ হয়ে যায়, রেজাল্ট খারাপ হয়, একটু বেশি মিথ্যা বলে এটা ঠিক। কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। আর সন্তান মাত্রাতিরিক্ত ছন্নছাড়া, বেখেয়ালি আচরণ করতে থাকলে আপনার সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক। সে যখন কোনো কিছুই মানতে চায় না, সব ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকবে তখন বুঝবেন কোথাও কোনো সমস্যা আছে। শুধু তাই না, এ থেকে বোঝা যায় সে নিজের আচরণের দায়িত্ব নিতেও শিখছে না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটাকাটি, অন্য কোনোভাবে নিজের ক্ষতি করা, ওজন খুব বেশি কমে বা বেড়ে যাওয়াটা এমন বেখেয়ালি আচরণের লক্ষণ। সুইসাইডের ব্যাপারে সে কিছু বললে অবশ্যই তা হেসে উড়িয়ে দেবেন না। তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।

এ ছাড়াও WebMD থেকে জানা যায় আরো কয়েকটি ছোটখাটো সমস্যা এবং তার সমাধান। যেমন:

– টিনেজার সন্তান আপনাকে বেশি মাত্রায় অপছন্দ, এমনকি ঘৃণা করা শুরু করেছে। এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। বাচ্চারা ১৬-১৭ বছর অর্থাৎ লেট টিনেজের দিকে এই অনুভূতি কাটিয়ে ওঠে। তবে সে আপনার সাথে খারাপ আচরণ করলে আপনার কঠোর হওয়া উচিৎ।

– তারা সারাক্ষণ মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে আছে। এখনকার সময়ে এটাকে অনেকে সাধারণ বলে ধরে নিলেও এটা আসলে তার জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন এগুলো ব্যবহারের। তারা খারাপ কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

– রাত করে বাসার বাইরে থাকা। আপনি তাকে বললেন ছয়টার মধ্যে বাসায় আসতে। সে ফিরলো সাড়ে ছয়টায়। আপনি রেগে লঙ্কাকাণ্ড করে ফেললেন। দেখুন আপনার বেঁধে দেওয়া এই সময়টা আসলে যুক্তিযুক্ত কী না। হয়তো তার বন্ধুরা এর চাইতেও বেশি সময় বাইরে থাকে, ফলে এতো আগে সে বাসায় আসতে চায় না। অথবা তার কোনো জরুরী কাজ ছিলো। এমন যদি হয় যে সে ইচ্ছে করে বাইরে বাইরে ঘুরছে তাহলে তাকে বসিয়ে কথা বলুন।



মন্তব্য চালু নেই