কুরআন উপলব্ধির মাস রমজান

রমজানকে বলা হয় রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস। রমজান তখনই মানুষের জন্য পরিপূর্ণ রহমত বরকত ও মাগফিরাত বয়ে আনবে যখন মানুষ কুরআন বুঝে তদানুযায়ী আমল করবে। কেননা এ কুরআনের আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। আর রমজানেই কুরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে। কুরআন নাজিলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দশ্য হলো- মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের পথে পরিচালিত করা।

এ কুরআনে রয়েছে সমগ্র ইনসানিয়াতের মুক্তির কলা-কৌশল। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী প্রয়োজন? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব তথা মহাবিশ্ব পরিচালনায় কি চাই? সবকিছুর সমাধান রয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে। এই কুরআনের মর্মভেদ বুঝার একমাত্র মোক্ষম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস।

রমজানের রহমত বরকত মাগফিরাত কামনায় আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা এ কুরআনকে বুঝে বুঝে পড়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ : আয়াত ২৯)

রমজান মাস কুরআনুল কারিমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাস। এ মাসের হক হলো মানুষ কুরআনের স্মৃতিচারণ করবে। কুরআন নিয়ে গবেষণা করবে। কুরআনের মর্ম উপলব্দি করে কুরআনি জিন্দেগি গঠন করার প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে আত্ম-নিয়োগ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, রমজান মাস; যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। যা মানবজাতির হিয়াদাত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশকারী এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৫)

কুরআনের মর্ম উপলব্দি করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে বন্দি করে রাখেন। এর কারণ হলো মানুষ যাতে জান্নাতি পরিবেশে অশান্তির বেড়াজাল ও শয়তানের ধোকামুক্ত হয়ে কুরআনের মর্ম উপলব্দি করতে পারে।

হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজা সমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়; জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলিত করা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)। এর একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে- মানুষ যেন কুরআনের মর্ম উপলব্দি করে সঠিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়।

তারাবিহ নামাজে কুরআন খুতম মুসলমানদের কুরআনের মর্ম উপলব্দির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কেননা হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হজরত জিব্রিল আমিন রমজানের প্রতি রাতে এসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন। (বুখারি)

কুরআনের মর্মার্থ উপলব্ধির জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লাম আদিষ্ট হয়েছেন; বর্ণনায় এসেছে- যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতে দুর্ভাগা-হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যে আমার দেয়া হিদায়াতের অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং দুঃখ কষ্টে পতিত হবে না। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১২৩)

এ কারণেই ইসলামের খলিফাগণ সদা সর্বদা কুরআনের মর্ম বুঝে অধ্যয়ন করতেন এবং সেমতে জীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সারা বিশ্ব পরিচালনা করতেন। খোলাফায়ে রাশেদার যুগই যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পরিশেষে…
রমজানের রহমত বরকত ও মাগফিরাত তখনই মানুষের জন্য পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হবে যখন মানুষ কুরআনকে তাঁর হক অনুযায়ী বুঝে অধ্যয়ন করবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের মর্মার্থ উপলব্দির মাধ্যমে রহমত বরকত ও মাগফিরাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। মানবতার সকল পর্যায়ে আল-কুরআনের বাস্তব শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই