কুড়িগ্রামের নীল কুমার নদী এখন ফসলের মাঠ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোত নীল কুমার নদী এখন মরা খাল। নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। বে-দখল হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর জমি। কালের বিবর্তনে নীল কুমার নদীর তলদেশ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাওয়ায় দু’পাড় কেটে করা হচ্ছে ফসলের চাষ।

মাঝি পাড়ার ওমল চন্দ্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও সব মৌসুমেই নদীতে পানি ছিল। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এ নদীতে যা বিক্রি করে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু এখন শুকনো মৌসুমে বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে নদীর বুক জুড়ে। আমাদের জেলে সম্প্রদায়ের অনেকেই শুকনো মৌসুমে রিকসা, ঠেলাগাড়ী চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।

নীলকুমার নদীর তীরের হাসেম আলী জানান, ৩০/৩৫ বছর আগেও নীল কুমার নদীটি ছিল গভীর ও খর¯্রােতা। ফুলবাড়ীর ব্যবসা বাণিজ্যের সিংহ ভাগই এই নদী পথ দিয়ে সংঘটিত হত। ফুলবাড়ী সদর, গংগারহাট, সদ্য বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া ছিট মহল, খড়িবাড়ী বাজার, নেওয়াশী বাজার ও পাখির হাট প্রভৃতি বড় বড় হাটবাজারে এই নদী পথেই আনা-নেয়া করা হত দৈন্নদিনের মালপত্র। নৌকা করে উৎপাদিত ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গরু, মহিষ ও হাঁস-মুরগী এই নীল কুমার নদী দিয়ে ধরলা হয়ে কাঠালবাড়ী, যাত্রাপুর, কুড়িগ্রাম সদর এবং ঐতিহ্যবাহী চিলমারী বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে যেত এ অঞ্চলের ওই সব বিক্রির জন্য। উত্তর বঙ্গের বিখ্যাত সুফি-সাধক ও ওলি মাওলানা কেরামত আলী এই নদী পথেই আসাম যাওয়া আসা করত । ইসলাম প্রচার ও ভক্ত মুরিদের বাড়ী বাড়ী ঘুরতেন তিনি । সে নদীটি এখন কেবলই স্মৃতি।

এলাকাবাসী জানান, এ নদী থেকে উঠানো হচ্ছে বালু। শ্যালো মেশিনের সাহায্যে এক শ্রেনীর মানুষ এ কাজ দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

গংগারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, আসাম হয়ে নীল কুমার নদী ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধরলা নদীতে মিলিত হয়েছে। ভারতে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে নীল কুমার নদী যৌবন হারাতে থাকে। নাখারজান সীমান্ত হতে ধনিরাম ধরলার সংযোগ পযর্šÍ পানি নিষ্কাশনের জন্য সংস্কার করা হলে নীল কুমার আবারো তার যৌবন ফিরে পাবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবু রশিদ জানান, নীলকুমসহ অন্যান্য নদীতে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরোসহ বিভিন্ন ফলস লাগিয়েছে কৃষকরা।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ভাইস প্রিন্সিপাল মীর্জা মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, নীল কুমার, ধরলা, তিস্তাসহ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় জীব বৈচিত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। প্রকৃতি সৌন্দয্য হারাচ্ছে। পাশাপাশি আম, জাম, লেচুসহ বিভিন্ন মৌসুমে ফলের গাছে আর আগের মতো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই