কুড়িগ্রামে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ‘ঐক্যবদ্ধ হলে সবে যক্ষা মুক্ত দেশ হবে’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে কুড়িগ্রামে বিশ^ যক্ষা দিবস পালিত হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে জিও-এনজিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্নয়ে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

র‌্যালী শেষে সিভিল সার্জন কার্যালয় মিলনায়তনে আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: নাসরিন বেগম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা: এসএম আমিনুল ইসলাম,ডা: সুভাষ চন্দ্র বোস, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি নাটাব জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু, প্রোগ্রাম অর্গানাজার মো: হান্নান প্রমুখ।

বক্তারা জানান,১৮৮২ সালের এ দিনে জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী রবার্ট কক যক্ষ্মা রোগের জীবানু উদ্ভাবন করেন। তিনি রোগের জীবানু আবিস্কার করলেও এর প্রতিষেধক বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। দীর্ঘ গবেষণার পর ১৯৪৪ সালে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ আবিস্কার করা হয়। হাজার বছরের পুরোনো এ রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বিরাজ করে নানা প্রতিবন্ধকতা। দুর্লভ এ চিৎকিসা ছিল অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। যক্ষার জীবানু আবিস্কারের শত বছর পর বিশ্ব ব্যাপী সচেতনাতা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ কে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশে যক্ষ্মা একটি মারাত্মক জনস্বাস্ব্য সমস্যা। বিশ্বের ২২টি যক্ষ্মা প্রবন দেশের মধ্যে বাংলাদেশর স্থান ৬ষ্ঠ। প্রতি বছর ৩ লাখ লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রনে ১৯৯৩ সাল বাংলাদেশ সরকার জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচী গ্রহন করে। এ কর্মসূচীর আওতায় ১৯৯৪ সালে সরকার ও বেসরকারী সহযোগী সংস্থার সাথে একটি অঙ্গীকার নামা স্বাক্ষরিত হয়।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রনে নাটাব ও আরডিআরএস সহ ৪৪টি বেসরকারী সংস্থা একযোগে কাজ করছে। যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রনে এ দেশে অগ্রপথিক হিসেবে কাজ করছে জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি নাটাব। ১৯৪৮ সালে আসাম টিবি এসোসিয়েশন নামে সিলেট থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেয়া হলেও সচেতনতার অভাবে অনেকে এ সেবা গ্রহন করতে পারছে না। আবার সম্পূর্ণ ভাবে চিকিৎসা না নেয়া ও নিয়মিত ঔষধ সেবন না করায় অনেকে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স টিবি রোগীতে পরিনত হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ। বর্তমানে দেশে ডটস্ পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হ্েচ্ছ। যার মাধ্যমে রোগীকে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবকের উপস্থিতিতে সরাসরি পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে পুরো মেয়াদে ঔষধ সেবন করানো হয়।

২০০৪ সাল থেকে এ পদ্ধতি চিকিৎসা কর্যক্রম চালু হয়। ডট্স্ পদ্ধতি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রনে উলেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ডটস্ শুরুর আগে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে ১০১ জন যক্ষ্মা আক্রান্ত ও ৪২% আরোগ্য লাভ করতো কিন্তু ডটস্ শুরুর পর বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি লাখে ৬৫ জন এবং আরোগ্য লাভ করছে ৯১.৬৪%। বাংলাদেশের গ্রাম,শহরের বস্তি ও দরিদ্রদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগীর হার বেশী। আমাদের দেশে সামাজিক কুসংস্কার,অজ্ঞতা,অবহেলা,অর্থনৈতিক সংকট ও তথ্যের অভাবে রোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চান না। এ ব্যাপারে যক্ষ্মারোগীদের সচেতন করে তোলা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।



মন্তব্য চালু নেই