কুড়িগ্রামে বিষাক্ত পণ্যে বাজার সয়লাব : প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তারা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে বিষাক্ত পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের অসাধূতায় ভোক্তাগণ কি খাচ্ছেন নিজেরাই বুঝতে পারছেন না। ভেজাল পণ্য, মেয়াদোতীর্ন ঔষধ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ওজনে কারচুপি, অধিক মূল্যসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে ঠকানো হচ্ছে ভোক্তাদের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিগত ৬ মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩১টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়াও হাজার হাজার ভেজাল ও নকল খাদ্য সামগ্রী বিনষ্ট করলেও থেমে নেই বিষাক্ত পণ্য তৈরির কাজ। ভোক্তাদের ঠকিয়ে রাতারাতি কিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হওয়া যায় এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে মহাজনী ব্যবসায়ীরাও অসাধু উপায় অবলম্বন করায় সরকারিভাবে অভিযান চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না এসব অপকর্ম।

কুড়িগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, বিগত ৬ মাসে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ৫৫০টি প্রতিষ্ঠানে বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে ৪১৯টি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে শতর্ক করা হলেও বাকী ১৩১টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অংকে ৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।

এরমধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ১৮৫টি, বেকারী ৪৫টি, আইসক্রিম কারখানা ১২টি, চানাচুর, আচার ও চকলেট ফ্যাক্টরী ৩০টি, সার, কীটনাশক ও বীজের দোকান ৫৫টি, মেডিকেল স্টোর ও ফার্মেসী ৬৫টি, এছাড়াও সরিষার তেলের মিল, ডায়গনস্টিক সেন্টার, জর্দ্দা ফ্যাক্টরী, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, মাছ ও মাংসের দোকানও রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে খাদ্যপণ্য তৈরি ও খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, মেয়াদোতীর্ন পণ্য ও ঔষধ, পণ্যের ওজন, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তির্ণের তারিখ না থাকা, পণ্য ও সেবার মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয়, ওজনে কারচুপি, ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করাসহ একাধিক অসাধূ উপায় অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে।

জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, বাজার তদারকিতে জরিমানা আরোপ ও আদায়ের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিপলেট ও প্যাম্পলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও অপরাধ পূণরায় না করতে সতর্ক করা হয়।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি একেএম সামিউল হক নান্টু জানান, সমাজে ভেজাল মানুষের মতো ভেজাল পণ্যে সব সয়লাব হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে নীতি, মূল্যবোধ ও বিবেক মরে গেছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ এখন অসহায়। খাদ্যদ্রব্যে অধিকহারে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যবহারের ফলে রোগ-ব্যাধি বেড়ে গেছে। এসব অপকর্ম ঠেকাতে হলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সজাগ হতে হবে। যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদি হতে হবে। তাহলে এরা অপকর্ম করতে সাহস পাবে না।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী জানান, ব্যবসায়ীদের অপরাধগুলো মারাত্মক। অনেক ব্যবসায়ী এ ব্যাপারে সচেতন নন। ভোক্তাদের পরিণাম চিন্তা না করে ব্যবসায়িক মূনাফা লাভের জন্য অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই সচেতন হতে হবে। তাহলে অপরাধ কমে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই