নিমতলী ট্রাজেডির পাঁচ বছর

কেমন আছেন প্রধানমন্ত্রীর সেই ৩ মেয়ে ?

আগামীকাল বুধবার নিমতলী ট্রাজেডির পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে দেশের মানুষ তাদের হাজারো স্মৃতির ভীড়ে ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের কথা ভুলে গেলেও ভুলেনি আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ১২৩ মানুষের স্বজনরা। তবে একটি কারণে ওই আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশের মানুষ কিছুটা হলেও মনে রেখেছে। আর তা হলো সেই ভয়াবহ আগুনে পরিবার পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ৩ কন্যার ‘মা’ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে বিয়ে দেয়ার ঘটনাটি। আর পাঁচ বছর পর কেমন আছেন প্রধানমন্ত্রীর সেই ৩ মেয়ে?

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩, নবাব কাটরা ৫ তলা বাড়িতে সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় কয়েকটি পরিবার। বাড়ির নীচে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়ে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এ দিনই ছিল রুনার বিয়ের ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের।

অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা, সাকিনা আক্তার রত্না ও আসমা আক্তার শান্তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকে টেনে নেন। ঘোষণা দেন এই তিন মেয়ে তার নিজের সন্তান। এরপরই গণভবনে নিজে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী তার তিন মেয়ের বিয়ে দেন।

গতকাল সোমবার হোসনী দালান রোড ও আগা সাদেক রোডে এ তিন কন্যার বাসায় গিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তাদের প্রত্যেকের ঘরেই এসেছে নতুন অতিথি। চার নাতি-নাতনীর নানি হলেন শেখ হাসিনা। এদের একজনের নাম আলী মর্তুজা আযান, দ্বিতীয় জন শ্রদ্ধা, তৃতীয় রমাদান এবং চতুর্থ আদর।

আলী মর্তুজা আযানের বয়স ২ দিন কম ৪ বছর। শ্রদ্ধার ২ বছর ৯ মাস এবং রমাদানের বয়স এক মাস কম চার বছর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ নাতির জন্ম হয়। তার নাম আয়াত হোসেন আদর।

চাঁনখার পুলের হোসনী দালান রোডের ১৮/১০, শিয়া গলির বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন প্রধানমন্ত্রীর বড় মেয়ে উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা। কেমন আছেন? জিজ্ঞাসা করা হয়। উত্তরে বলেন, ‘মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) দোয়ায় ভালোই আছি। তবে হারিয়ে যাওয়া মা, খালা, বোনদের কথা বার বার মনে হয়। তাদেরকে হারানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ হিসেবে পাওয়ার পর আমাদের আর কোনো কষ্ট নেই।’

তিনি জানান, ২০১১ সালের ৫ জুন তার ঘরে এসেছে আলী মর্তুজা আযান। প্রধানমন্ত্রী তার নাতির খোঁজ নিয়েছেন। আযান জন্ম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে ফুল পাঠিয়েছিলেন। এমন আযান নামটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই রেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘অবশ্য ২০১৩ সালে ২৯ ডিসেম্বর আদরের জন্ম গ্রহণের খবর ‘মা’র কাছে দেয়া হয়নি। সংসদ নির্বাচনে ব্যস্ত থাকার কারণে ‘মা’র সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি। পরে অবশ্য মাকে খবর দেয়া হয়েছে।’

রুনা বলেন, ‘মায়ের ব্যস্ততা আর নিরাপত্তার জন্য তার সঙ্গে নিয়ামিত দেখা হয় না। তবে গত রোজার মধ্যে আমরা তিনবোন মিলে গণভবনে দেখা করতে যাই। তখন মা আমাদের বিস্তারিত খোঁজ নেন। এমনকি আমাদের সন্তানদেরও তিনি খুব আদর করেন।’

রুনার স্বামী সৈয়দ রাশেদ হোসাইন জামিল জানান, বিয়ের সময় তার মা (প্রধানমন্ত্রী) তাকে একটি চাকরি দেয়ার কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌ-বাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন সংসার ভালোই চলছে।

প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় মেয়ে সাকিনা আক্তার রত্না জানান, এখনো সেই দিনের কথা বার বার মনে পড়ে। তখন কেউ দেখার ছিল না। গণভবনে বিয়ের পর মায়ের (শেখ হাসিনা) নির্দেশে তার স্বামী সাইদুর রহমান সুমনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দেয়া হয়। এখন তারা ১৬/৫, নবাব বাগিচায় থাকছেন। তাদের ঘরে মেয়ে সন্তান শ্রদ্ধার আগমন। এখন শ্রদ্ধাকে ঘিরেয়ে তাদের জীবন।

প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় মেয়ে আসমা আক্তার শান্তা জানান, গণভবনে বিয়ের পর তার মা (প্রধানমন্ত্রী) স্বামী আলমগীর হোসেনকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন তারা পুরান ঢাকার আগা সাদেক লেনের ৯৬/১, একতা নিবাসের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন।

আপন মা যেমন জামাই বাড়ি গ্রীষ্মের ফল পাঠান, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীও তাদের তিনবোনের বাসায় প্রত্যেকবার ফল পাঠান। সরাসরি বছরে একবার দেখা হলেও শত ব্যস্ততায় বিভিন্ন উৎসবে নিয়মিতই খোঁজ নেন তাদের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা তাদের তিন বোনের উকিল বাবা হাজী সেলিম এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা এমএ আজিজ তাদের নিয়মিতই খোঁজ-খবর রাখেন। আপন মেয়ের মতো সব ভালোমন্দ দেখেন তারা।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূলত দুই সন্তান। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই